Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Diamond Harbour

‘রায় পছন্দ নয়’, ডায়মন্ড হারবারে বিচারকের ‘দুয়ারে’ হামলা! আঙুল পুলিশের দিকেও, কী পদক্ষেপ?

ডায়মন্ড হারবার জেলা আদালতের মুখ্য বিচারক এবং কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেন মোট তিন বিচারক। তাঁদের অভিযোগ, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বিচারক আবাসনে দুষ্কৃতীরা হামলা করে।

বিচারক আবাসনে দুষ্কৃতী হামলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিচারক আবাসনে দুষ্কৃতী হামলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:০০
Share: Save:

বিচারকদের আবাসনে দুষ্কৃতী হামলা এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবার জেলা আদালতের তিন বিচারক। আঙুল তুলেছিলেন পুলিশি ব্যবস্থার দিকেও। বুধবার সকালে বিষয়টি হুলস্থুল শুরু হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসল ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানালেন পুলিশ সুপার রাহুল গোস্বামী। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, ‘‘দোষী যে-ই হোক, কাউকে ছাড়া হবে না।’’ তিনি জানান, এক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তাঁকে ‘ক্লোজ়’ করা হয়েছে। অন্য দিকে, শাসকদলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই ঘটনার সঙ্গে বিচার বা বিচার ব্যবস্থার উপর হামলার কোনও সম্পর্ক নেই। ইতিমধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় এ কথা জানান তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।

গত রবিবার গভীর রাতে ডায়মন্ড হারবারে বিচারকদের আবাসনে দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগ উঠেছে। সে নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন এক বিচারক। কিন্তু পদক্ষেপের বদলে এক পুলিশ আধিকারিক দুষ্কৃতীদের ‘মদত’ দেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ওই ঘটনার কথা তুলে ধরে ডায়মন্ড হারবার জেলা আদালতের মুখ্য বিচারক এবং কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেন মোট তিন বিচারক। তাঁদের অভিযোগ, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বিচারক আবাসনে দুষ্কৃতীরা আসে। জোর করে আবাসনের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে তারা। নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা উপেক্ষা করে ভিতরে ঢুকতে চায় তারা। শুধু তা-ই নয়, থানায় খবর দেওয়ার পরেও পুলিশ ঘটনাস্থলে দেরি করে আসে বলে অভিযোগ। বিচারকেরা জানান, ওই ঘটনার পরে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের উপরেও ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দেওয়ার পরেই হামলার মুখে পড়ছেন তাঁরা।

ওই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয় জেলা রাজনৈতিক মহলেও। সেখানকার বার কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, এক জন লোক মুখ ঢেকে জজ সাহেবের আবাসনে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। রবিবারের ঘটনা। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তারা সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছে। এই ঘটনা নিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন পুলিশকে। গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে বিষয়টি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁকে জবাব দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।’’

বিচারকেরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার জানান, ইতিমধ্যে ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিচারকদের উপর হামলার অভিযোগ গুরুত্ব সহকারেই দেখা হচ্ছে। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এক জন পুলিশ আধিকারিকের নামে অভিযোগ এসেছিল। সেটাও গুরুত্ব সহকারে আমরা দেখছি।’’

পুলিশের একটি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্টে অভিযোগ যাওয়ার পরে বিচারকদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিচারক আবাসনে রাত ৮ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পিকেটিং-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এই ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘‘স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়েছি, বিচারকদের আবাসনে এক ব্যক্তি উঁকিঝুঁকি দিয়েছিলেন। তিনি ঢোকেননি। হামলার যে কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। ইতিমধ্যে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diamond Harbour Court police Judges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE