মাছ ধরতে যাওয়ার অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র
বছর বদলায়। বদলায় না কাকদ্বীপের ধীবরদের বাৎসরিক মৃত্যু-মিছিল।
গত কয়েক বছর ধরে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারডুবি এবং মৎস্যজীবীদের মৃত্যু যেন রুটিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মৎস্য দফতরের কর্তারা নিশ্চিত যে, এর মূলে রয়েছে একটি দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের কেঁদো দ্বীপ সাক্ষাৎ মৃত্যু-দ্বীপে পরিণত হয়েছে।
ফি বছর বার বার ট্রলারডুবি এবং প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে মৎস্যজীবীদের পরিবারে। গত বছর জুলাই মাসেই কাকদ্বীপে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন ৪২ জন। ২৮ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। বাকিদের খোঁজ মেলেনি এখনও।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খারাপ আবহাওয়ায় পথ হারিয়ে ৩২টি ট্রলার বাংলাদেশের পায়রা উপকূল বন্দরের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। ট্রলারগুলিতে ৫১৯ জন মৎস্যজীবী রয়েছে। ফোনে জানিয়েছেন, তাঁরা নিরাপদেই রয়েছেন। তবে তাঁদের ট্রলার থেকে ডাঙায় নামতে দেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবারও আবহাওয়া খারাপ থাকায় তাঁরা রওনা হতে পারেননি।
কেন এই মৃত্যু মিছিল?
মৎস্যজীবীরা বলছেন এক বার নয় ফি বছর বারবার সমুদ্রে প্রাণ যাচ্ছে মৎস্যজীবীদের। সতর্কবার্তা থাকছে। তার পরেও কেন ঠেকানো যাচ্ছে না প্রাণহানি। উত্তর খুঁজতে গিয়েই উঠে আসছে কেঁদো দ্বীপের নাম। মৎস্যজীবীদের একাংশ মনে করছেন বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপই যেন সাক্ষাৎ মৃত্যু-দ্বীপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মৎস্য দফতরের কর্তারা বলছেন, সতর্কবার্তা পেলে সব ট্রলারের বন্দরে ফেরার কথা। কিন্তু কাকদ্বীপ, নামখানা এবং ফ্রেজারগঞ্জের বেশ কিছু ট্রলার বন্দরে না ফিরে কেঁদো দ্বীপে নোঙর ফেলে অপেক্ষা করছে। আবহাওয়া সামান্য ভাল হলেই তাঁরা ফের সমুদ্রে পাড়ি দেয়। আর তাতেই বিপদ বাড়ে। সদ্য যে তিনটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটল, তার সবকটিই রওনা হয়েছিল কেঁদোদ্বীপ থেকে।
গত কয়েক বছরে বঙ্গোপ সাগরে রাজ্যের যতগুলি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে, সব গুলিই দক্ষিণ ২৪ পরগনার। সেগুলি হয় কাকদ্বীপের, নয় নামখানার না হলে ফ্রেজারগঞ্জের। রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় কার্যত কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এখানেই উঠছে কেঁদো দ্বীপের নাম।
কাকদ্বীপের মৎস্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘ওই কেঁদো দ্বীপই যত নষ্টের গোঁড়া। বারবার সতর্ক করা হলেও অনেক ট্রলার ওই দ্বীপে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকছে। সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার আগেই তারা মাছ ধরতে ঘবীর সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে বিপদে পড়ছে।’’
কাকদ্বীপ বৌবাজারের মৎস্যজীবী স্বপন হালদার বলেন, ‘‘বছর তিনেক আগে আমি কেঁদো দ্বীপ থেকে সাগরে গিয়ে এমন বিপদেই পড়েছিলাম। কোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছি। তার পর থেকে সতর্কবার্তা পেলে বন্দরে ফিরে আসি।’’ তিনি জানালেন, কিছু ট্রলার কেঁদো দ্বীপে বসে থাকে অন্যদের তুলনায় আগে সমুদ্রে গেলে বেশি মাছ পাওয়া যাবে এই আশায়। অনেক সময় আবহাওয়া সামান্য পরিষ্কার হতে না হতেই তাঁরা সমুদ্রে পাড়ি দেন। বিপদ ঘটে তাতেই। বন্দরে থাকলে নজরদারির কারণে তাঁরা সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারতেন না।
মৎস্যজীবীদের দু’টি সংগঠনের কর্তা বিজন মাইতি এবং সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘কেঁদো দ্বীপের থাকা ট্রলারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায় না। তার ফলে অনেকে খেয়ালখুশি মতো সমুদ্রে পাড়ি দেন। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ জয়ন্ত বলছেন, ‘‘নিয়ম আরও কঠোর করা হচ্ছে। সতর্কবার্তার পরেও যাঁরা বন্দরে ফিরবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপর মহলে জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy