Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

বেঁচেছে গ্রাম, ফের বাদাবন গড়বেন ওঁরা

পরিবেশবিদদের মতে, ২০০৯ সালে আয়লার সময়ে সাগরদ্বীপের বহু গ্রাম স্রেফ জলে তলিয়ে যেত ম্যানগ্রোভ না থাকলে।

তছনছ ম্যানগ্রোভ। তবু রক্ষা করেছে এরাই। নিজস্ব চিত্র

তছনছ ম্যানগ্রোভ। তবু রক্ষা করেছে এরাই। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০৬:৪৫
Share: Save:

আয়লার অভিজ্ঞতা শিক্ষা দিয়েছিল সুন্দরবনকে। আর সেই শিক্ষাকে সত্যি সত্যি হাতে কলমে কাজে লাগিয়েছিলেন সাগরদ্বীপের কৃষ্ণনগর, নরহরিপুর, রাধাকৃষ্ণপুরের মানুষ। তাঁরা এখন বলছেন, আমপানের দাপট থেকে অনেকটাই রক্ষা করেছে ম্যানগ্রোভের পাঁচিল।

পরিবেশবিদদের মতে, ২০০৯ সালে আয়লার সময়ে সাগরদ্বীপের বহু গ্রাম স্রেফ জলে তলিয়ে যেত ম্যানগ্রোভ না থাকলে। আয়লার পরে পরেই হুগলি নদীর চরে নতুন করে বন তৈরির কাজ শুরু করেছিল কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সাহায্য করেছিল বন দফতর। হাত লাগিয়েছিলেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। প্রায় ৫০ কিমি জুড়ে বিস্তার ছিল সে জঙ্গলের।

বছর দশেক আগে লাগানো সেই সব সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া গাছেদের অর্ধেকই নষ্ট হয়েছে আমপানের দাপটে। গ্রামেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। বহু বাড়ি ভেঙেছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। তবে বাঁধ ভাঙার খবর নেই। যে কারণে গ্রামের মানুষ বলছেন, ম্যানগ্রোভের অরণ্য না থাকলে ক্ষতি হত আরও বেশি। আশপাশের গ্রামগুলিতে যেখানে নোনা জলে জমি নষ্ট হয়েছে, সেখানে কৃষ্ণনগর, নরহরিপুর, রাধাকৃষ্ণপুরের জমি শুধু ডুবেছে প্রবল বর্ষণে। নোনা জলে উর্বরতা হারানোর ভয় নেই এখানে।

কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা শুকদেব নাথ। সাগরদ্বীপের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় চাষে অবদানের জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রক তাঁকে পুরস্কৃত করেছে। শুকদেব বলেন, “বাদাবনের অবদান নিয়ে আর কোনও সন্দেহের জায়গা নেই। গাছগুলি নেহাতই কমবয়সী। তারপরেও ঝড়ের ঝাপটা সহ্য করে এলাকাকে অনেকটাই বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমরা এই বন ফের গড়ব।”

শুকদেব বলেন, “আয়লার তুলনায় এ ঝড় ছিল অনেক ভয়ানক। বাড়ি-ঘর অনেক উড়েছে। তবে সব শেষ হয়ে যায়নি। গাছও পড়েছে বিস্তর। বুলবুলের সময়েও এমনটা ঘটেছিল। কিন্তু আমাদের এলাকায় বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম। এটা ওই বাদাবনের জন্যই।”

শুকদেব নিজেও কৃষিভিত্তিক একটি সমবায় চালান। তাঁর ডাকে আয়লার সময়ে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসেছিল এলাকায়। তাঁদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বাদাবন তৈরি করা হয়েছিল। ঝড়ের ছ’দিন পরে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ফেরত এসেছে। চারদিকে যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি। বন বাঁধতে তৈরি হচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারাও।

সুন্দরবনের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার সন্তোষা জে আর বলেন, ‘‘গ্রামের অত কাছে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল থাকলে তা ঢালের মতোই কাজ করবে। ম্যানগ্রোভের শিকড়ের বিন্যাস অনেকটা জালের মতো। আর একটি গাছ থেকে অন্য গছের দূরত্ব কম বলে ঝড় সহ্য করার ক্ষমতা বেশি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Mangrove Cyclone Aila
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE