Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali

নতুন নৌকো বানাতে ১ লক্ষ টাকা, কোন ব্যাঙ্ক দেবে জানতে চান বিষ্ণু

স্ত্রী ও ছেলেকে সময় মতো সরিয়ে কাছেই শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন ৪০ বছরের দাঁড়-টানা পেটানো শরীরের বিষ্ণু।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

কালো মেঘের চাদরটা যত নদীর উপরে নেমে আসছিল, ভয়ঙ্কর ফুলেফেঁপে গর্জন করতে শুরু করছিল রায়মঙ্গল। আর তারই আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছিল বিষ্ণুপদ বর্মনের হাহাকার।

নদীর পাড়ে বাঁশ আর মাটি মিশিয়ে তৈরি একচালার ঘরের সংসারটা তছনছ করতে বেশি সময় নেয়নি ঝাপটা মারা হাওয়া। মোটা কাছি দিয়ে বাঁধা ছোট্ট নৌকাটাকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমপান। ধ্বংসের সাক্ষী হিসেবে সেই নৌকো এখন দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে নদীর পাড়ে।

স্ত্রী ও ছেলেকে সময় মতো সরিয়ে কাছেই শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন ৪০ বছরের দাঁড়-টানা পেটানো শরীরের বিষ্ণু। নিজেও ইদানীং সেখানেই থাকছেন। আবার নতুন করে শুরু করছেন না কেন, প্রশ্নটা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে লাল চোখ করে বলেন, “মাছ ধরার এই ছোট নৌকো নতুন করে বানাতে ১ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। কে দেবে? জমিজিরেত নেই। কোন কাগজটা দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাব?”

কলকাতা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার গেলে ধামাখালি। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ২ ব্লক। সেখান থেকে ছোটকুলগাছি আর রায়মঙ্গল নদী পথে এক ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় শীতলিয়া। খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই শীতলিয়া গ্রাম একপাশে ছোট কুলগাছি আর অন্য দিকে রায়মঙ্গল নদীকে জড়িয়ে প্রায় সতেরেশো পরিবার নিয়ে জেগে থাকে। বেশিরভাগ মানুষের রুজিই নদীতে মাছ ধরা। মাছ বলতে মূলত বাগদার চারা। নদীর উজানে ৬ ঘণ্টা দাঁড় বাইলে তবে প্রায় ১ হাজার ছোট চারা জালে ধরা পড়ে। বিষ্ণুরা এক একটা চারার দাম পান ২০ পয়সা করে। সেই চারা হাত ঘুরে চলে যায় ভেড়ি মালিকের কাছে। আমপান আসার খবর তো আগেই পৌঁছেছিল। তা হলে কেন সংসার ও নৌকা সরিয়ে ফেলেননি? ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন বিষ্ণু। বলেন, “আয়লায় তো এতটা ক্ষতি হয়নি। বুলবুল নিয়ে যতটা ভয় পেয়েছিলাম, ততটা তো ক্ষতি করেনি। কিন্তু, আমফানের শক্তি বুঝতে ভুল করেছিলাম।”

হাওয়ার ঝাপটায় নোনা জল বাঁধ উপচে ঢুকে এসেছিল গ্রামের ভিতরে। মানুষ প্রথম চার দিন কোমর সমান জল নিয়ে কাটিয়েছেন। ঘরের জল সরে গেলেও চাষের জমির জল সরেনি এখনও। বিষ্ণুর মতো অনেকেই এখন সেই নোনা জলে ভেটকির চারা ধরছেন। এক একটি চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। সেটাই এখন রোজগারের একমাত্র উপায়।

এখন এই ভরা আষাঢ়ে ওই সব জমিতে আমন ধানের বীজতলা পড়ার কথা ছিল। পেশায় স্কুলশিক্ষক, আদতে এই এলাকার আদি বাসিন্দা পলাশ বর্মন, এখন কলকাতা থেকে যতটা পারছেন সাহায্য করছেন এই মানুষগুলোকে। সুন্দরবন উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া তুষার কাঞ্জিলালের কন্যা তানিয়া দাস রয়েছেন উদ্যোগে। গ্রামে যৌথ রান্নাঘর চলছে। সেখান থেকে পরিবারের তিনজনকে সকালে একবার করে খাওয়ানো হচ্ছে। গ্রামের খাদেমুল ইসলাম, আবুল গাজি, মানস মণ্ডল, গোলক মণ্ডলরা দিনরাত এক করে খেটে চলেছেন।

পলাশের কথায়, “নোনা জলের জন্য সম্ভবত আগামী দু’বছর চাষ করা যাবে না। কল্যাণী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞদের আনা হচ্ছে। নোনা মাটিতে কোন ফসল ফলানো যাবে, তাঁরা পরামর্শ দেবেন।”

ছোট জটলায় কোলে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রিঙ্কু বিশ্বাস। এই অবস্থায় কী ধরনের সাহায্য চাই আপনাদের? হাত জোড় করে রিঙ্কু বলেন, “সরকার যদি ভাল করে বাঁধটা সারিয়ে দেন, তাহলে আমাদের আর কিছু চাই না। এই আমপান সামলে নিয়েছি। আগামী দিনে এই নড়বড়ে বাঁধ নিয়ে আরও কত আমপানের মুখোমুখি হতে হবে জানি না। এই এক যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না।” বড় যন্ত্র লাগিয়ে নদীর পাড়ের এক দিক থেকে মাটি তুলে বাঁধের উপরে ফেলার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy