প্রতীকী ছবি।
ভোর থেকে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন মঙ্গলা সর্দার। দীর্ঘ লাইন ঠেলে ব্যাঙ্কে ঢুকে নিজের পাসবই আপডেট করাতে চাইলেন। ব্যাঙ্কের এক কর্মী জানিয়ে দিলেন, এখন পাস বই আপডেট হবে না। তিনি ওই কর্মীর কাছে জানতে চাইলেন, উজ্জ্বলা গ্যাসের টাকা ঢুকেছে কিনা। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হল, কোনও টাকা ঢোকেনি। গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করতেও বলা হল।
নিরুপায় হয়ে মহিলা ছুটলেন গ্যাস অফিসে। সেখানেও দীর্ঘ লাইন ঠেলে যখন ভিতরে গেলেন, তখন গ্যাস অফিসের এক কর্মী সিস্টেম চেক করে বললেন, ১০ এপ্রিল বাসন্তী স্টেট ব্যাঙ্ক শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্টে ৭৮৩ টাকা ঢুকে গিয়েছে। উজ্জ্বলা গ্যাসের ওই গ্রাহকের মোবাইলেও টাকা ঢোকার মেসেজ চলে এসেছে। অথচ ব্যাঙ্কের কারণে সরকারি বিনামূল্যের গ্যাস তিনি নিতে পারছেন না।
শুধু বাসন্তীর মঙ্গলা সর্দারই নন, সাজিদা শেখ, আম্বিয়া লস্কর-সহ বিপিএল তালিকাভুক্ত অনেকেই উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা প্রকল্পের সুবিধা নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। ভাঙড়ের কাশীপুরের নাংলা গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বিবির শোনপুরে একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট। তিনিও প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্র সরকার ঘোষণা করে, লকডাউন চলাকালীন তিন মাসের জন্য বিপিএল তালিকাভুক্ত প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা প্রকল্পের গ্রাহকদের বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেবে। এ জন্য ওই প্রকল্পে গ্যাসের সংযোগকারী গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে অগ্রিম টাকা ঢুকে যাবে। গ্রাহকেরা ব্যাঙ্ক থেকে সেই টাকা তুলে নিয়ে গ্যাস অফিস থেকে সরাসরি সিলিন্ডার সংগ্রহ করবেন।
অভিযোগ, ব্যাঙ্কের গড়িমসির কারণে সময় মতো টাকা তুলতে পারছেন না অনেকে। যদি কোনও গ্রাহক প্রথম কিস্তির টাকায় গ্যাস না তোলেন, তা হলে তিনি পরের মাসের কিস্তির টাকা পাবেন না বলেও সরকারি নিয়ম।
মঙ্গলা, আম্বিয়ারা বলেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ পেয়েছিলাম। লকডাউনের সময়ে আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা ভেবে কেন্দ্র সরকার তিন মাস বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার কথা বলেছে। ব্যাঙ্কে আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার মেসেজও পেয়েছি। তারপরেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বলছেন, টাকা ঢোকেনি। যে কারণে বিনামূল্যে গ্যাস তুলতে পারছি না। এ জন্য ডিস্ট্রিবিউটর ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।’’ বাসন্তীর একটি গ্যাস এজেন্সির মালিক শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার কাছে ওই প্রকল্পের প্রায় ৬৩ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। যাঁদের অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করছেন। অথচ, আমরা আমাদের সিস্টেমে দেখতে পাচ্ছি, ওই সব গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে গিয়েছে। কী কারণে ব্যাঙ্ক টাকা দিচ্ছে না, তা বুঝতে পারছি না।’’ তিনি নিজেও বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা বলেন, ‘‘এ রকম বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’’ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ সময়ে ব্যাঙ্কে এমনিতেই কর্মী কম আসছেন। বহু মানুষ টাকার জন্য ভিড় করছেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে টাকা না থাকার কারণে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। আবার অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করেননি। অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিঙ্ক করেননি। ফলে সেই সব গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।’’ জেলার সমস্ত ব্যাঙ্কের মুখপাত্র তথা লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার রজতকুমার বালা বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। তবে এ সময়ে ব্যাঙ্কে পাসবই আপডেট করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy