অনিশ্চিত: এখন থমকে কাজ
তীব্র গ্রীষ্মের সুনসান দুপুর। খাঁ খাঁ রাস্তাতে জনমানবের চিহ্ন হয় তো পাওয়া যেত না। তবুও খুটখাট শব্দটা কিন্তু থেমে থাকত না কখনও। এর সেই শব্দই বুঝিয়ে দিত যে, এটা পানিতর গ্রাম। আর খুটখাট শব্দে তাঁত যন্ত্রে গামছা বোনা চলছে।
সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ এ গ্রামের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তারও আগে থেকেই গামছা গ্রামের শিরোপা জুটেছিল পানিতরের। পরে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে এই শিল্প। নোটবন্দি, জিএসটি-র ধাক্কা সামলে যখন হামাগুড়ি দিচ্ছে গামছা শিল্প, ঠিক তখনই করোনা আতঙ্কে ঘোষণা হল লকডাউন। তার ফলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁত। লকডাউন গামছা শিল্পের গলার কাঁটা হয়ে আশঙ্কার কালো মেঘ তৈরি করেছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার কর্মীর জীবনে।
বসিরহাটের ইটিন্ডা পানিতর গ্রামের কারিগরপাড়ার তাঁতশিল্পীদের তৈরি গামছার এক সময়ে দেশ জোড়া খ্যাতি ছিল। ওই গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়ির বারান্দায় বসানো তাঁত এবং চরকা। কেউ কেউ স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করেন। তবে বেশিরভাগই মহাজনদের কাছ থেকে সুতো বা তুলো নিয়ে গামছা তৈরি করেন। দিনে দিনে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে লাভও কমেছে। তবে ভাত-কাপড়ের অভাব ছিল না এখানকার শ্রমিকদের।
পানিতরের পাশাপাশি ধলতিথা, পিঁফা, দেভোগ, দিয়াড়া, সোলাদানা, ফুলবাড়ি, মাটিয়া, রঘুনাথপুর, খিদিরপুর, বেগমপুর, জয়নগর, পিয়াড়া, কাটিয়াহাট, বড়বাঁকড়া গ্রামেও গামছা তৈরি হয়। লকডাউনের জেরে পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তা। তাঁতশিল্পীদের দাবি, তাঁরা তিনজন যদি রোজ দু’-আড়াই ঘণ্টা কাজ করেন, তা হলে সপ্তাহে আয় হয় ৯০০ টাকা মতো। সময় বেশি দিলে বাড়ে রোজগারও। চরকায় সুতো তোলা, তাতে মাড় ঘষার কাজ বাড়ির মহিলারাই করেন।
অন্যান্য অনেক জায়াগায় গামছা তৈরি হয় এখন। কিন্তু তার থেকেও বেশি বাজার কেড়েছে যন্ত্রচালিত তাঁত। কিন্তু ব্যবসা সঙ্কটে পড়ে নোটবন্দির সময়ে। শুরু থেকে পুরো ব্যবসাটাই ছিল নগদ নির্ভর। তার ফলে টানা কয়েক মাস ব্যবসা প্রায় বন্ধ ছিল। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হতে না হতে ফের ধাক্কা আসে জিএসটি চালুর পরে। তাতে সমস্যায় পড়েন গামছার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা গামছা কেনা কমিয়ে দেন। নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়। সেই ধাক্কা সামলে যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছিল এখানকতার গামছা শিল্প, তখনই শুরু হল লকডাউন।
পানিতর গ্রামের আবুল হোসেন মোল্লা, মাটিয়ার সওকত আলি বলেন, “আগের সমস্যা তবুও বুঝে উঠতে পেরেছিলাম। কিন্তু এই লকডাউনের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। মহাজন জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা গামছা কিনতে পারবে না। আবার রঙ, সুতো তুলো কিছুই আসছে না। ফলে এই শিল্প বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। শ্রমিকেরা আগ্রহ হারিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।” এই অবস্থায় তাঁত শিল্পী এবং শ্রমিকেরা সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। তাঁতশিল্পী সংগঠনের জেলার কর্মকর্তা রূপেন রায় বলেন, “লকডাউনে তাঁত শিল্প বিপর্যস্ত। কয়েক হাজার শিল্পী এবং শ্রমিক কাজ হারানোয় গামছা শিল্প সম্পূর্ণ উঠে যাওয়ার অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।”
— ফাইল চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy