রিপোর্ট আসার আগেই ঘোরাঘুরি করছেন অনেকে। সংগৃহীত চিত্র।
করোনা পরীক্ষার জন্য লালারস দিয়েছিলেন বনগাঁ ব্লকের ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা তাঁকে বলে দিয়েছিলেন, রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তিনি যেন বাড়ি থেকে বের না হন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধা নিষেধ শোনেননি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছিলেন। বাগদায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছিলেন। বুধবার তাঁর রিপোর্ট এলে দেখা যায়, তিনি করোনা পজ়িটিভ। এই সময়ের মধ্যে তিনি অনেকেরই সংস্পর্শে এসেছিলেন।
বনগাঁ ব্লকের এক যুবকও একই ভাবে রিপোর্ট আসার আগে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছেন৷ বনগাঁ শহরের বাসিন্দা কয়েকজন ব্যক্তিও একই ভাবে ঘোরাঘুরি করেছেন রিপোর্ট আসার আগেই। রিপোর্ট এলে দেখা যায়, সকলেই করোনায় আক্রান্ত। তাঁরাও অনেকের সঙ্গে মেলামেশা করেছিলেন। এই উদাহরণগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা হতাশ। তাঁদের কথায়, ‘‘বাড়ির সামনে আমরা তো আর পুলিশ পাহারা বসাতে পারি না। মানুষ যদি এতটুকুও সচেতন না হন, আমরা কী করতে পারি। এর ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।’’
লালারস দিয়ে রিপোর্ট আসার আগে বাইরে বের হওয়া এক ব্যক্তির পাল্টা অভিযোগ, ‘‘৬ অগস্ট লালারস দিয়েছিলাম। রিপোর্ট এসে পৌঁছয় ১১ অগস্ট। স্বাভাবিক ভাবেই আমার মনে হয়েছিল, আমি নেগেটিভ। তা ছাড়া, জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোতেই হয়েছে। রিপোর্টের জন্য কত দিন বাড়ি বসে থাকব!’’ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে দ্রুত লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এসে পৌঁছয়।’’ এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, ‘‘মাঝে রিপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিকে, বনগাঁ মহকুমায় ক্রমবর্ধমান করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। রোজই নতুন করে মানুষ এখানে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ একটা বড় অংশের মানুষ এখনও সচেতন হচ্ছেন না। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বনগাঁ মহকুমায় মোট করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫১৯ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৬১ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মহকুমায় নতুন করে ২৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বনগাঁ মহকুমার মধ্যে করোনায় সব থেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বনগাঁ ব্লকে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার নতুন করে ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০২ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২১ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে একজনের।’’
গাইঘাটা ব্লকে বৃহস্পতিবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘ব্লকে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৫ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে একজনের।’’
বাগদা ব্লকে বৃহস্পতিবার নতুন করে ৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘বাগদা ব্লকে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ জন। চিকিৎসাধীন ৪২ জন। বাকিরা সুস্থ। মৃত্যু হয়েছে একজনের।’’
বনগাঁ পুরসভা এলাকায় গত দশ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘বুধবার পর্যন্ত শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০২ জন। চিকিৎসাধীন ৫৬ জন। বাকিরা সুস্থ। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। বনগাঁ শহরে পথের সাথীতে শীঘ্রই সেফহোম চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক বলেন, ‘‘মানুষ বাজার-হাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। মাস্ক থুতনিতে মাদুলির মতো ঝুলিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন অনেকেই।’’ বনগাঁ শহরে মানুষজন পথে বেরিয়ে কম বেশি মাস্ক পরছেন। তবে গ্রামীণ এলাকায় সে সবের বালাই নেই বললেই চলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy