—প্রতীকী ছবি।
গাইঘাটা ব্লকের বাসিন্দা এক মহিলা জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে গিয়েছিলেন চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা করে করোনা পজ়িটিভ মেলে। চিকিৎসকেরা তাঁকে বাড়িতে গিয়ে আলাদা থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ওই অবস্থায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান।
গাইঘাটা ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রিপোর্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে মহিলা চলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের করোনা পজ়িটিভ হওয়ার খবরও জানাননি।
গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা মহিলার বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোঁজ পাননি। পরে জানা যায়, তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। আমরা সেখানে মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁকে সেখানে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এখন মহিলা সুস্থ।’’
সুজন বলেন, ‘‘আমরা জানতে পারি, মেয়ে ও স্বামী যাতে আক্রান্ত না হন, তাই মহিলা রোগ গোপন করে আত্মীয়ের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। অথচ, তিনি একবারও ভাবলেন না, তাঁর মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনেরাও সংক্রমিত হতে পারেন!’’
করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের তরফে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি চলছে। তারপরেও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি বনগাঁ মহকুমায়। বনগাঁ, বাগদা, গোপালনগর, গাইঘাটা সর্বত্র পথে বেরোলেই দেখা যাচ্ছে হাটেবাজারে, সড়কে মাস্ক ছাড়া মানুষ ঘোরাঘুরি করছেন। অটো, টোটো, ভ্যান, বাস-সহ বিভিন্ন যানবাহনে মানুষ গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন। হাটে বাজারে শারীরিক দূরত্বের কোনও বালাই নেই। বাজারহাটে ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। শব নিয়ে গাড়ি বোঝাই করে শ্মশানযাত্রীরা যাতায়াত করছেন। শ্মশানেও মাস্ক পরছেন না। শারীরিক দূরত্ববিধিও বজায় থাকছে না।
এ দিকে বনগাঁ মহকুমা জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যদিও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন তুলনায় কম। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩৮৬ জন। মোট অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৩১৮ জন। ১৫ নভেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪১২৮ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০৬ জন। অর্থাৎ ১৬-২৩ নভেম্বর পর্যন্ত আট দিনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫৮ জন।
এই পরিস্থিতি বনগাঁয় ফের একবার করোনা হাসপাতালের দাবি তুলছেন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সোমবার তাঁরা ওই দাবি তুলে মহকুমাশাসক এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সেখানে দাবি তোলা হয়েছে, দ্রুত বনগাঁয় একটি পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতালে চালু করতে হবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বনগাঁর একটি বেসরকারি নার্সিংহোমকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়। যদিও বাস্তবে তা শুরু হয়নি।
মহকুমার মধ্যে বাগদা ব্লকের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত বাগদা ব্লকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫৫ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৭৮ জন। বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার খুবই অভাব। আক্রান্ত রোগীর পরিবারের লোকজন অবাধে বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, ‘‘পুজোর পরে এখন বনগাঁ মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় কমছে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে।’’
বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বেশি বেশি করে পরীক্ষা করানোর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।’’ গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন বলেন, ‘‘দেড় মাস আগেও ১০০ জনের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হলে ১০-১৫ জন পজ়িটিভ রোগী পাওয়া যেত। এখন পজ়িটিভ মিলছে ২-৪ জন। এলাকায় হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে বলেই আক্রান্তের সংখ্যা কমছে বলে মনে হচ্ছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বনগাঁ পুরসভা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৬৪ জন। অ্যাক্টিভ রোগী ১০৬ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy