Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Religionism

করোনাভাইরাসের জেরে মতুয়া ধর্মমেলা নিয়ে উদ্বেগ

এই ধর্মমেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। সেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ধর্মমেলার কামনা সাগরে স্নানের ভিড়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক ও ফাইল চিত্র

ধর্মমেলার কামনা সাগরে স্নানের ভিড়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক ও ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০২:১৫
Share: Save:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে বড় জমায়েত, সভা-সমিতি, ধর্মীয় মেলার আয়োজন বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশ বিদেশের অনেক ধর্মীয় সমাবেশই বাতিল করা হয়েছে।

এই পরিস্থতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে আসন্ন মতুয়া ধর্মমেলা নিয়ে। এই ধর্মমেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। সেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রতি বছর মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বসে ওই মহামেলা। এ রাজ্য বসবাসকারী মতুয়া ধর্মের মানুষেরা তো আসেনই, দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মতুয়া ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে ছুটে আসেন। ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরে (বড় পুকুর) পুণ্যস্নান করেন ভক্তরা। হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর মেলা শুরু হওয়ার কথা আগামী শনিবার, ২১ মার্চ।

উদ্বিগ্ন ঠাকুরনগরের সচেতন মানুষ এ বার ধর্মমেলা বন্ধ রাখার দাবি তুলেছেন। রবিবার সকালে তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে ঠাকুরনগর রেল স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেন। করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিত্যযাত্রীদের তাঁরা সচেতন করেন। কর্মসূচি থেকে এ বার ধর্ম মহামেলা বন্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে। ওই বিষয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষের সই সংগ্রহ করেন। ঠাকুরনগরের বাসিন্দা আইনজীবী লিটন মৈত্র বলেন, ‘‘মতুয়া ধর্ম মহামেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ কামনা সাগরে পুণ্যস্নান করেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন মানুষও যদি কামনা সাগরে স্নান করেন তা হলে লক্ষ মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে।’’ কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ, কোনও সংক্রমণ হলেই মানুষের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখতে। এ দিকে এখানে স্নান করার সময় একে অপরের গা ঘেঁষে থাকেন। তা সত্যিই বিপজ্জনক বলে তিনি জানান।

সই সম্বলিত স্মারকলিপি পুলিশ প্রশাসন ও মেলা আয়োজকদের কাছে দেওয়া হবে। লিটন বলেন, ‘‘স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও মেলা বন্ধ না হলে আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।’’ এ দিন নিত্যযাত্রীদের অনেকেই মারণ রোগ ঠেকাতে মেলা বন্ধ করার জন্য আয়োজকদের কাছে অনুরোধ করেছেন ।

অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর মেলার আয়োজন নিয়ে বলেন, ‘‘আমরা মতুয়া ধর্ম মহামেলা বন্ধ করার কেউ নই। মতুয়া ভক্তদের আগমনের ফলে মেলা হয়। ভক্তরা মেলায় আসেন রোগ থেকে মুক্তি পেতে। আমাদের পক্ষ থেকে মেলা করব না ঘোষণা করা সম্ভব নয়।’’

সই সংগ্রহ নিয়ে শান্তনু বলেন, ‘‘যাঁরা বিজেপিতে জায়গা পাননি, এমন লোকজন তৃণমূলের সঙ্গে মিলে নিজেদের স্বার্থে মেলা বন্ধ করতে চাইছেন।’’ জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা চাই, মানুষের জীবন বাঁচাতে মেলা এ বার বন্ধ হোক। এটা তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএমের বিষয় নয়।’’ সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘ধর্ম আনন্দ উৎসব চলবে। কিন্তু মানুষের জীবন আমাদের কাছে সবথেকে মূল্যবান। মেলা বন্ধ করতে প্রশাসনের কোনও নির্দেশ আসেনি। এলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে মেলা হলেও ভক্তদের সমাগমে প্রভাব পড়বে।’’ পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার মেলার আয়োজন নিয়ে ঠাকুরবাড়ির সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে হাইকোর্টে। আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে কী মেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মুক্ত করা যায় তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক করেছেন। বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মতুয়া মেলা, গাজনের মেলা-সহ সমস্ত মেলায় লোক সমাগম হয়। কী ভাবে সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো পদক্ষেপ করা যায় তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।’’ মতুয়া মেলা নিয়ে প্রশাসনের বক্তব্য, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Religionism Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy