প্রস্তুতি: বালুরঘাটে আইসোলেশন ওয়ার্ড। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসে ত্রাহি রহ জেলা স্বাস্থ্য দফতর জুড়ে। এখন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের কোনও খবর নেই বলেই জানিয়েছে তারা। তবে একই সঙ্গে শুরু হয়েছে মোকাবিলায় প্রস্তুতিও। সেই লক্ষ্যেই আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করলেন রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার হাসপাতালের চারতলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ও পাঁচতলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে একটি করে পৃথক ঘরে ওই ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। দুটি ওয়ার্ডে পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য একটি করে শয্যা রয়েছে। ওই দুটি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে তাঁদের চিকিৎসার কাজে নিযুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক বদল ও অপেক্ষা করার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে পরিকাঠামো যা, তাতে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে এই রোগীদের অন্যত্র রেফার করে দিতেই হবে, জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ দিলীপ পালের বক্তব্য, কোনও রোগী হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তা নির্ণয়ের পরিকাঠামো তাঁদের নেই। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কোনও পুরুষ বা মহিলা রোগী চিকিৎসা করানোর জন্য হাসপাতালের বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগে এলে, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের ওই দুটি ওয়ার্ডে কিছুক্ষণ ভর্তি রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা করবেন। এরপর তাঁদের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেওয়া হবে। দিলীপের দাবি, তাই আপাতত ওই দুটি ওয়ার্ডে একটি করে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর মধ্যে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের একাংশ অভিযোগ করে, এদিন হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন এবং সার্জিক্যাল ওয়ার্ড-সহ সমস্ত ওয়ার্ডে বেশিরভাগ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মাস্ক ও গাউন পরে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেননি। চিকিৎসক, নার্সদের বক্তব্য, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এন-৯৫ মাস্ক পরার নিয়ম। হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত ওই মাস্ক এসে পৌঁছয়নি। তবে সংক্রামক রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার সময়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা গাউন পরেন।
মালদহ
মালদহ মেডিক্যাল
কলেজ ও হাসপাতাল
• সংক্রামক বিভাগ: আছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ওই ওয়ার্ডেই পৃথক আট শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• অভিযোগ: চিকিৎসক, নার্সেরা মাস্ক ব্যবহার করলেও রোগীর আত্মীয়দের দেওয়া হয় না।
• পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমন্টস (পিপিই): ২০০টি
• মাস্ক মজুত: ‘এন-৯৫’ ৩৫০টি
• বাজারে মাস্কের চাহিদা:
করোনা আলোচনায় মাস্কের চাহিদা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ২০ থেকে ৫০ বা ৬০ টাকা দরে বিকোচ্ছে কাপড় দিয়ে তৈরি মাস্ক। যা মূলত পথেঘাটে ধুলো বা দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হয়। স্টেশনারি, ওষুধ এবং ফুটপাতের কাপড়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক।
করোনাভাইরাসে এখনও আক্রান্ত হওয়ার খবর নেই। তবে হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগেই পৃথক আটটি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ ধরনের মাস্ক, পিপিই গাউন মজুত করা হয়েছে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি।
—অমিতকুমার দাঁ, সুপার, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
উত্তর দিনাজপুর
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
• সংক্রামক বিভাগ: নেই। করোনাভাইরাস আক্রান্তের জন্য সাধারন ওয়ার্ডেই পৃথক দুট শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• অভিযোগ: সংক্রামক বিভাগ না থাকায় সাধারন রোগীদের সঙ্গেই ডায়েরিয়া আক্রান্তদেরও চিকিৎসা হয়।
• পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমন্টস (পিপিই): ১৫০টি।
• মাস্ক: ‘এন-৯৫’ মাস্ক নেই। তবে সাধারণ মাস্ক প্রায় ৫ হাজার মজুত রয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
• বাজারে চাহিদা: প্রায় ২৫ শতাংশ চাহিদা রয়েছে। পাতলা জাল, কাপড়ের মাস্ক ৩৫-৫০ টাকা এবং ৬০-১০০ টাকা দিয়েও বিক্রি হচ্ছে। স্টেশনারি, ওষুধ এবং ফুটপাতের কাপড়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক।
আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘এন-৯৫’ মাস্ক চাওয়া হয়েছে।
—দিলীপকুমার পাল, অধ্যক্ষ রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
দক্ষিণ দিনাজপুর
বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল
• সংক্রামক বিভাগ: আছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য চারটি পৃথক শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• অভিযোগ: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই। রোগীর আত্মীয়দের মাস্কের বালাই নেই।
• পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমন্টস (পিপিই): ১০০টি।
• মাস্ক মজুত: ‘এন-৯৫’ ৫০০টি।
• বাজারে মাস্কের চাহিদা: প্রায় ২৫ শতাংশ চাহিদা বেড়েছে। হাল্কা জাল দিয়ে তৈরি মাস্ক ২৫ থেকে ৩৫ টাকা এবং কাপড়ের মাস্ক ৫০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। স্টেশনারি, ওষুধ এবং ফুটপাতের কাপড়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক।
করোনা রুখতে সব রকমের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। যদিও এখানে করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। — তপন বিশ্বাস, সুপার, বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল
দিলীপবাবুর দাবি, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক চেয়ে আবেদন করেছেন।
উত্তর দিনাজপুরের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-২ দেবাশিস মণ্ডলের দাবি, জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এন-৯৫ মাস্ক নেই। বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে যে পরিমাণে মাস্ক রয়েছে, তা রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর কাজও শুরু হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জেলার নয়টি ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে জেলা জুড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা দ্রুত শুরু করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy