প্রতীকী ছবি।
হাবড়ার কিছু বাসিন্দার শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির সন্ধান মিলল।
দিন কয়েক আগে সিপিএমের হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একটি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে ওই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১৩ জন মানুষ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। বেশিরভাগই ছিলেন হাবড়া শহরের বাসিন্দা। অ্যান্টিবডি পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, ২১৩ জনের মধ্যে ১৭ জনের অ্যান্টিবডি পজ়িটিভ এসেছে। অর্থাৎ, ওই ১৭ জন কোনও না কোনও সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তা নিজেরা বুঝতেও পারেননি। উপসর্গ ছিল না। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণের দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে তাঁরা নিজের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে সংক্রমণের কথা জানতে পারলে তাঁদের গৃহনিভৃতবাসে থাকার কথা ছিল। এ কারণেই করোনা পরীক্ষার পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
সিপিএমের হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী নিজেও অ্যান্টিবডি পজ়িটিভ হয়েছেন। তাঁর বয়স ৫৭ বছর। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কখন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম, তা টের পাইনি। কোনও উপসর্গ ছিল না। পরীক্ষায় পজ়িটিভ হওয়া মানে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’
অ্যান্টিবডি-বৃত্তান্ত
•শরীরে যখন কোনও ভাইরাস আক্রমণ করে, তার বিরুদ্ধে শরীর পাল্টা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং এক ধরনের প্রোটিন সৃষ্টি করে। তারই নাম অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
•কোনও মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যাওয়ার অর্থ, তাঁর করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
•যাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে, তাঁদের নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
•অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনও গোষ্ঠীতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে কিনা বোঝা যায়। কোনও এলাকার মানুষের মধ্যে ৫০ শতাংশ হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলে ওই এলাকায় সংক্রমণ ক্রমশ কমতে থাকবে।
•অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় নেগেটিভ মানে গত তিন মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হননি।
•সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
•লালারস বা র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা তা বোঝা সম্ভব নয়।
•অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে মানে ওই ব্যক্তির উপসর্গ না থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত অন্য কেউ তাঁর থেকে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন।
তথ্য: শঙ্করলাল ঘোষ, সুপার হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল
২১৩ জন মানুষের মধ্যে ১৭ জন অ্যান্টিবডি পজ়িটিভ হওয়া মানে পরিমাণটা প্রায় ৮ শতাংশ। হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজারের মতো। ৮ শতাংশের হিসেবে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার মানুষের মধ্যে এত দিনে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। এ বিষয়ে সরকারি স্তরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো উচিত বলেও মনে করছেন তাঁরা।
সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা তা বোঝা যায়। সেই হিসেবে পরীক্ষার রিপোর্ট জানার পরে তাঁদের অনুমান, হাবড়া শহরের করোনা পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং হাবড়া গোষ্ঠী সংক্রমণের দিকেও এগোচ্ছে। চিকিৎসকদের একাংশও মনে করছেন, হাবড়ায় করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আশুতোষ বলেন, ‘‘হাবড়ার করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য দফতর, প্রশাসন এবং মানুষের সচেতনতা যদি এক সঙ্গে যুক্ত করা না যায়, তা হলে এর ফল হাবড়াবাসীকে ভুগতে হবে।’’
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় পজ়িটিভ হওয়া মানুষদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সহযোগিতা করবেন। দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে আবেদন করে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্তদের কাজে প্রয়োজনে যেন পুরসভা, প্রশাসন এই মানুষদের ডেকে নেন। তাঁরা আক্রান্তদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।
হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরে ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৯৪ জন। মারা গেছেন ৮ জন। রোজই লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘হাবড়া শহরে করোনা গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। করোনা ঠেকাতে সব ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy