সন্তপ্ত: পারমাদনে মৃতদের শ্রদ্ধা জানাতে মোমবাতি মিছিল। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
গ্রামের পথে বিধায়ককে সামনে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তন্দ্রা মুহুরি। অনুরোধ করলেন, ‘‘আমার মায়ের জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন। না হলে সংসারটা ভেসে যাবে।’’
নবতিপর শিবাণী মুহুরির দেহ নবদ্বীপে সৎকার করতে নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন বাগদার পারমাদন এলাকার ১৩ জন। অনেক পরিবারেই একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় পরিবারগুলির এখন চিন্তা, বাকি দিনগুলো চলবে কী করে!
মঙ্গলবার বিকেলে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এলাকায় যান। সঙ্গে ছিলেন সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান সৌমেন ঘোষ, বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তরুণ ঘোষ। সেখানে তন্দ্রার সঙ্গে দেখা হয় বিধায়কের। তাঁর বাবা শ্যামল বিশ্বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তন্দ্রার বাপের বাড়ি পারমাদন-সংলগ্ন ঝুপা গ্রামে। শ্বশুরবাড়ি পারমাদনে। তাঁর শ্বশুর রবীন্দ্রনাথ মুহুরি দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তন্দ্রার বাবা শ্যামল বিঘে দু’য়েক জমিতে চাষবাস করতেন। পরিবার চলত তাঁর আয়েই। বাপের বাড়িতে রয়েছেন মা তাপসী এবং অসুস্থ ঠাকুমা বাসন্তী। কী ভাবে তাঁদের ভরণপোষণ চলবে, তা ভেবে চিন্তিত তন্দ্রা। তাঁর কথায়, ‘‘মা একটা কাজ না পেলে না খেয়ে মারা যাবেন। আমি কাজ পেলেও মাকে দেখতে পারব।’’
কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তন্দ্রার শ্বশুরবাড়িতেও একমাত্র রোজগেরে তাঁর শ্বশুর। স্বামী দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বাবা হয় তো আর কাজ করতে পারবেন না। আমাকে একটা কাজ জোগাড় করতেই হবে। না হলে সংসারটা ভেসে যাবে।’’
দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বৃন্দাবন ও জয়ন্তী মুহুরির। তাঁদের একমাত্র ছেলে প্রসেনজিৎ আবুধাবিতে কাজ করতেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার সস্ত্রীক বাড়ি ফিরেছেন। এদিন বললেন, ‘‘আর বিদেশে যাওয়া হবে না। বাড়িটা তো শ্মশান হয়ে গেল। কী করে ফিরব! এখানেই একটা কাজকর্ম খুঁজতে হবে। সরকার কাজের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’’
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সুকুমার বিশ্বাস। বাড়িতে ছেলে সমীর ও স্ত্রী শ্যামলী। সুকুমার চাষবাস করতেন। তাঁর আয়েই সংসার চলত। সমীর এ বারই বিএ পাস করেছেন। বিধায়কের কাছে কাঁদতে কাঁদতে তিনিও কাজের অনুরোধ জানালেন। বললেন, ‘‘কী করে মায়ের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দেব জানি না।’’ বিধায়ক বলেন, ‘‘বাবার পারলৌকিক সব কাজ আগে করো। কাজের বিষয়টা দেখছি।’’
দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন অমলেন্দু বিশ্বাস এবং অমর বিশ্বাস নামে দুই ভাই। দু’জনেরই এক ছেলে, এক মেয়ে। দু’জনের ছোট দোকান ছিল। তাঁদের রোজগারেই অন্নসংস্থান হত। স্ত্রী বাসন্তী, মল্লিকারা চিন্তিত, ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা, তা ভেবে।
বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা এই সব পরিবারগুলির পাশে রয়েছি। সব রকমের সহযোগিতা করব।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামে মোমবাতি মিছিল করেন গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ীরা। দু’একটি দোকানও এদিন খুলেছে।
গ্রামের ৬ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গ্রামবাসীদের প্রার্থনা, তাঁদের সকলে যেন ভালয় ভালয় বাড়ি ফেরেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy