মণ্ডপে এসে গিয়েছেন দেবী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
পির বাবার মাজারের পাশেই আয়োজন হয় দুর্গাপুজোর। গ্রামের হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মেতে ওঠেন পুজোর আয়োজনে। গোপালনগরের পাল্লা দক্ষিণপাড়ার এই পুজোয় সম্প্রীতির এমন ছবিই ধরা পড়ে বরাবর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাজারটি অনেক পুরনো। এলাকার প্রবীণ মানুষেরাও জানেন না, ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল। বছরভর দূরদূরান্ত থেকে হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের মানুষই এসে চাদর চড়ান। দোয়া করেন। আর শারদ উৎসবের সময়ে গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে ওঠেন দুর্গা পুজোর আয়োজনে।
মাজারের পাশেই একফালি মাঠে প্রতি বছর পূজিত হন দশভূজা। রবিন, সুমন, সন্দীপদের সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর আয়োজন করেন ইয়া, নাজিম, শাহজাহানেরা।
পাল্লা দক্ষিণপাড়া পুজো কমিটির এই পুজো এবার ৮৭ বছরে পড়েছে। পুজোর থিম— ‘তোমাদের বাড়ছে গতি, আর আমাদের বাড়ছে দুর্গতি।” ইন্টারনেটের রমরমার যুগে বিভিন্ন জায়গায় বসছে মোবাইল টাওয়ার। এর ফলে পাখিরা বিপন্ন বলে মনে করেন অনেকে। পুজোর থিমে সেই বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।
মণ্ডপ জুড়ে মাটির হাঁড়ি, শোলা দিয়ে তৈরি হয়েছে পাখি ও পাখির বাসা। মণ্ডপে ঢুকলেই শোনা যাবে পাখির কলরব। মোবাইল টাওয়ারও তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমাতেও রয়েছে চমক। দেবী এখানে গাছের মধ্যে অধিষ্ঠিত। প্রতিমা তৈরি করেছেন বাসুদেব দাস।
পুজোর পাশাপাশি পথনিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে ট্যাবলোর মাধ্যমে পথচলতি মানুষ ও যান চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। পুজোর দিনগুলিতে থাকছে বাউল সঙ্গীত-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বুধবার পুজোর উদ্বোধন করেছেন বনগাঁর পুলিশ সুপার জয়িতা বসু। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপি লাহিড়ী, কেকে’র প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
এ সবের ঊর্ধ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই এই পুজোর মূল সুর। স্থানীয় সূত্রের খবর, মণ্ডপের জন্য বাঁশ কাটা থেকে চাঁদা সংগ্রহ, সবই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেন এলাকার দুই সম্প্রদায়ের যুবকেরা। মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে আসা, পুজোর ক’দিন ভিড় সামলানো বা অনুষ্ঠান পরিচালনাতেও যোগদান থাকে সকলের।
স্থানীয় এক মুসলমান বৃদ্ধের কথায়, “ছোটবেলা থেকে আমরা এক সঙ্গে মিলেমিশে পুজোর আয়োজন করি। পুজোর ক’টা দিন হিন্দু ভাইদের সঙ্গে আমরাও আনন্দে মেতে উঠি। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই।”
পুজো কমিটির সম্পাদক কিশোরকুমার দে বলেন, “আমাদের এখানে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভিত কতটা দৃঢ়, তা একবার ঘুরে না গেলে বোঝা সম্ভব নয়। প্রতি বছর পৌষ মাসে পির বাবার মাজারে মেলা বসে। সেটাও আমারা একত্রে আয়োজন করি। আর দুর্গা পুজোয় প্রতিমা মণ্ডপে তোলা থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, বাঁশ কাটা, প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া সব আমরা এক সঙ্গে করি।”
শাহজাহানের কথায়, “অন্যত্র কী অবস্থা জানি না। তবে আমাদের এখানে সকলে মিলে শান্তিতে বসবাস করছি। ইদ, পুজো, মেলায় আমরা এক সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠি। এটাই আমাদের পরম্পরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy