প্রতীকী ছবি।
একশো টাকা জমা রাখলে এক বছরে দেড়শো টাকা ফেরত মিলবে।
পাঁচশো টাকা জমা রাখলে এক বছরে মিলবে দ্বিগুণ।
আকাশছোঁয়া এমন প্রতিশ্রুতির মোহে পড়ে কত মানুষ যে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। হাবড়া-মছলন্দপুরে এক সময়ে রমরমিয়ে চলত বহু ছোটবড় ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা।
‘র্যামেল’, ‘সারদা’ ছাড়াও ‘সম্প্রীতি’, ‘পিএফএল’, ‘ভিভজিও’, ‘অলমাইটি’— কত সব গালভরা নাম তাদের। ঝাঁ চকচকে অফিস। কোট-টাই পরা এজেন্ট।
এ সব দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল অনেকের। প্রথম ছ’আট মাসে হই হই করে অনেকে টাকা ফেরতও পেয়েছেন। আর সেই লোভে পড়েই আরও বেশি মানুষ বেশি বেশি করে টাকা রাখতে শুরু করেছেন। আর যখন ডুবেছে, সবটাই গিয়েছে জলে।
দিন মজুরির কাজ করতেন মছলন্দপুরের এক যুবক। দিনভর হাড়ভাঙা খেটে রোজগারের সামান্য কিছু টাকা স্থানীয় একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, এক সঙ্গে মোটা টাকা হাতে পেলে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করবেন। স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তার আগেই লাটে উঠেছে সংস্থা। সুদ তো দূরের কথা, আসল টাকাটাও ফেরত পাননি ওই যুবক। বছর পাঁচেক পুরনো সেই ঘটনার কথা এখন মনে রাখতে চান না। বললেন, ‘‘মনে করলে শুধু মন খারাপই হয়। বড় ভুল করে ফেলেছিলাম।’’
মছলন্দপুর এলাকার বহু দিনমজুর, খেতমজুর, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকুরিজীবী ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে এমন ভাবেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বিশ্বাসহাটির শেখর দেবনাথ মেয়ে ও স্ত্রীকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন সোমবার রাতে। পুলিশের দাবি, ঋণে ডুবে ছিলেন। সে কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। পাড়া-পড়শিরা জানিয়েছেন, তিনিও বেশ কিছু টাকা অর্থলগ্নি সংস্থায় রেখেছিলেন। যার কিছুই ফেরত পাননি।
স্থানীয় বাসিন্দা, আসবাব ব্যবসায়ী রঞ্জন সাহা একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় আড়াই লক্ষ টাকা রেখেছিলেন। সবটাই খুইয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই চিটফান্ডের যাঁরা কর্তা ছিলেন, তাঁরা কিন্তু দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। অথচ আমরা যারা টাকা রাখলাম, তারা সর্বস্বান্ত। সরকারের উচিত ওই কর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা।’’
বাপাই মিত্র নামে এক যুবক দোকানে কাজ করতেন। বেশি টাকা সুদের লোভে দু’টি সংস্থায় প্রায় ৮০ হাজার টাকা রেখেছিলেন। এজেন্টের কাজও করতেন। নিজের টাকা তো ফেরত পানইনি, জানালেন, সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করার পরে ধারকর্জ করে, পকেটের টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষের দেনা মিটিয়েছেন।
শিবু বিশ্বাসও চিটফান্ডে টাকা রেখেছিলেন। প্রায় ৬০ হাজার টাকা চোট গিয়েছে বলে জানালেন। এজেন্টের কাজ করে অনেকের টাকা তুলেছিলেন বাজার থেকে। সে সব ফেরত না দিতে পারায় লোকজন প্রথমে তাঁর উপরেই চড়াও হয়েছিলেন।
পরে সকলে বুঝতে পারেন, টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। টাকা খোওয়া যাওয়ার পিছনে ভূমিকাও নেই।
হাবড়া-মছলন্দপুরে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। বাসিন্দারা জানালেন, যারা গত কয়েক বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে।
মছলন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ চিটফান্ডে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। তবে এখন এখানে কোনও চিটফান্ড নেই।’’ পুলিশ হাবড়া থানা এলাকা থেকে অর্থলগ্নি সংস্থার বেশ কিছু কর্তাকে গ্রেফতারও করেছে। অফিস বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু ইতিমধ্যে গচ্ছিত টাকা ফেরত না পেয়ে কারও মেয়ের বিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারও চিকিৎসায় ছেদ পড়েছে। টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় এখনও দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক মহিলা বললেন, ‘‘এমন ভাবে লিখবেন, যাতে টাকা ফেরত পাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy