ভাঙড়ের শাড়ির দোকান। নিজস্ব চিত্র।
পুজোর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। অথচ এখনও ভিড় নেই পোশাক, জুতো বা আর পাঁচটা দোকানে, যেখান থেকে উৎসবের দিনগুলির জন্য কেনাকাটা সারেন মানুষ। লকডাউন যে আর্থিক ভাবে অনেককেই সঙ্কটে ফেলেছে, তা মানছেন সব পক্ষ। এ বার পুজোও বহু জায়গায় নমো নমো করে সারা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসার অবস্থা এক ধাক্কায় ঘুরে দাঁড়ানোর মতো হবে বলে মনে হয়নি বহু ব্যবসায়ীর। বাজারের অবস্থাও বলছে সে কথাই। কেনাবেচার যা হাল, লোকসান কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে হিসেব কষতে শুরু করেছেন অনেকে।
হিঙ্গলগঞ্জ বাজারের পোশাক বিক্রেতা দেবব্রত নাথ বলেন, ‘‘লকডাউনের পরে কাজ ছেড়ে অনেকেই বাড়ি চলে আসেন। এরপরে আমপানের দাপটে বাড়ি, জমির ক্ষতি হয় অনেকের। এই আমপান বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। আমরা ধারবাকিও দিতে পারছি না। তাই বিক্রি খুব কম হচ্ছে।’’
হাসনাবাদ বাজারের একটি পুরনো বড় পোশাকের দোকানের মালিক মৃণালকান্তি ঘোষ জানান, প্রতি বছর পুজোর ১০-১৫ দিন আগে যত ক্রেতা আসতেন, এ বার তার ২৫ শতাংশ আসছেন। প্রত্যেকবার পুজোর আগে এই দোকানে ১৩-১৪ জন করে কর্মী নেওয়া হলেও এ বার তা নেওয়া হয়নি। স্থায়ী ৮ জন কর্মীই দোকান চালাচ্ছেন। মৃণালকান্তির কথায়, “লকডাউনের জন্য দীর্ঘ দিন দোকান বন্ধ ছিল। বহু টাকা বাকি আছে। হালখাতা এ বার করতে পারিনি। তাই টাকা কিছুই ওঠেনি। অন্যবার পুজোয় দেদার ধারবাকি দেওয়া হলেও এ বার তা সম্ভব হচ্ছে না। আমরাও যেখান থেকে বাকিতে মাল পেতাম, সেখান থেকে বাকিতে পাচ্ছি না।’’ এই বাজারের আর এক পোশাকের দোকানের মালিক জগদীশ সাহা জানালেন, এ বার দোকানে হালখাতা হয়নি। যাঁদের টাকা বাকি আছে, তাঁরা আগের বছরের টাকা এখনও দিতে পারেননি। তাই পুজোর কেনাকাটা করতে আসতে সংকোচ বোধ করছেন।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বায়লানি বাজারের এক পোশাক বিক্রেতা অমিত পাত্র বলেন, “গত বছর পুজোর ১০-১৫ দিন আগে দিনে গড়ে ১ লক্ষ টাকার বিক্রি হয়েছে। এ বার দিনে ৩০-৪০ হাজারের বেশি হচ্ছে না।’’ তবে মানবিক কারণে কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়নি বলে জানালেন তিনি।
মায়ের সঙ্গে ভাঙড় বাজারে পুজোর কেনাকাটা করতে এসেছিল বছর পনেরোর সৌরভ দে। সাড়ে সাতশো টাকায় প্যান্ট কেনা হলেও বাজেট কম থাকায় জামা কিনে দিতে পারলেন না মা। গত বছর পুজোয় তিন সেট জামা-প্যান্ট হয়েছিল সৌরভের। এ বার একটি প্যান্ট কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হল। সৌরভের মা পৌলমী বলেন, ‘‘আমার স্বামী টোটো চালক। করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন বসে ছিলেন। আয় তেমন ছিল না। শত কষ্টের মধ্যেও ছেলেমেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে ধারদেনা করে অল্প করে কিছু কিনে দিলাম।’’
পুজোর মরসুমে বাজার একেবারেই মন্দা যাচ্ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ দোকান ফাঁকা। ক্রেতার দেখা নেই।
ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার, পোলেরহাট বাজার শোনপুর বাজার, ভাঙড় বাজার, ঘটকপুকুর বাজার ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ কাপড়ের দোকান, জুতোর দোকান ফাঁকা। ভাঙড় ও ঘটকপুকুর বাজার সব থেকে বড়। অন্যান্য বছর পুজোর আগে এই সময়ে বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকত না। এ বার সব শুনশান। বেচাকেনা না থাকায় অনেক কাপড়ের দোকানদার বড়বাজার থেকে থান কাপড় কিনে এনে মাস্ক বানিয়ে বিক্রি করছেন। বাজারে সরবরাহ করছেন।
ভাঙড় বাজারের অন্যতম বড় কাপড়ের ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ ভৌমিক ও সেলিম আখতার। অন্যান্যবার এই সময়ে তাঁদের দৈনিক বেচাকেনা হত প্রায় ১ লক্ষ টাকা। এ বার ২০-৩০ হাজার টাকায় তা নেমে এসেছে। তাঁদের কথায়, ‘‘পুজো উপলক্ষে প্রচুর মাল তুলেছিলাম। যা পরিস্থিতি, বেচাকেনা একদম নেই।’’
মানস সর্দার নামে এক কাপড়ের দোকানদার বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া দুর্বিষহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ মহাজনের দেনা কী ভাবে শোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
ভাঙড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মানুষের হাতে টাকা নেই। বাজার মন্দা। আর কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে স্বাভাবিক বেচাকেনা না হলে ব্যবসায়ীরা বিরাট লোকসানের সম্মুখীন হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy