পেট্রাপোলে পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ল স্থলপথে সীমান্ত বাণিজ্যে। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল দিয়ে সোমবার সকাল থেকে পণ্য বাণিজ্যের কাজ স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুপুর থেকে পণ্য রফতানি-আমদানির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সোমবার বেলা ৩টে থেকে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য বাণিজ্যের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ দিন সকালে ১৫৬টি গাড়ি পণ্য নিয়ে পেট্রাপোল থেকে বাংলাদেশের বেনাপোলে গিয়েছিল।’’ কার্তিকের কথায়, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি শান্ত হলে আলোচনার মাধ্যমে রফতানির কাজ শুরু করা হবে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।’’
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে বেনাপোল বন্দরে অশান্তি ছড়ায়। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ রাস্তায় নেমে ‘আনন্দ-মিছিল’ করেন। পেট্রাপোল সীমান্তের ঠিক আগে বিজিবি মিছিল আটকে দেয়। বেনাপোলে বিক্ষোভ ভাঙচুর চলে। আওয়ামি লিগের অফিসে হামলা হয় বলে অভিযোগ। শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি, মূর্তি ভেঙে লিগের পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সে সময়ে পেট্রাপোল-বেনাপোলের মধ্যে যাতায়াতের গেট আটকে দেওয়া হয়। বেনাপোল থেকে কয়েক জনকে ছুটে এ দেশে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তাঁরা আবার বেনাপোলে ফিরে যান।
পেট্রাপোল বন্দর সূত্রের খবর, বেনাপোল এলাকাতেও আশান্তি ছড়িয়েছে। এ দেশ থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে যাওয়া প্রায় দু’শো ভারতীয় ট্রাক চালক সেখানে আটকে পড়েছেন। ট্রাকগুলিতে বোঝাই করা মালপত্র ছিনতাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তাঁরা। কার্তিক অবশ্য বলেন, ‘‘ভারতীয় ট্রাক চালকদের দ্রুত পেট্রাপোলে ফিরিয়ে আনা হবে। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা বলেছি, ভারতীয় ট্রাকে থাকা পণ্যের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে।’’
এ দিকে, বেনাপোল উত্তপ্ত হতেই পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বিএসএফ নিরাপত্তা আরও বাড়িয়েছে। গোটা বন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিএসএফের দখলে চলে যায়। বিএসএফের আধিকারিক পেট্রাপোল বন্দরে আসেন। ভারতীয় সেনার দু’টি গাড়ি দেখা গিয়েছে। তবে কী কারণে সীমান্তে সেনা এসেছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল মুখে কুলুপ এঁটেছে।
বেনাপোলে গোলমাল শুরু হতেই পেট্রাপোল বন্দরের দোকানপাট, মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র সহ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে যাত্রী যাতায়াতের উপরেও। সোমবার খুবই কম যাত্রী যাতায়াত করেছেন। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মী বাপ্পা ঘোষ বলেন, ‘‘সকালের দিকে কিছু যাতায়াত করেছেন। তারপর থেকেই
কার্যত হাতেগোনা কয়েক জনকে দেখলাম।’’
অশান্তি উপেক্ষা করে এ দিন বিকেলে স্বামী অনি সরকারকে কলকাতায় চিকিৎসককে দেখাবেন বলে সাতক্ষিরা থেকে এ দেশে এসেছেন প্রিয়াঙ্কা রানি সাগর। সঙ্গে শিশুসন্তানও আছে। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘সাতক্ষিরা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত বাস চলছে না। অটো, টোটো করে এসেছি। মিছিল বেরিয়েছে। দেশের পরিস্থিতি ভাল না। বাড়িতে মা-বাবা আছেন। খুবই চিন্তা হচ্ছে।’’
এ দেশ থেকে রবিবার ব্যবসার কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা জালালউদ্দিন মণ্ডল। তিনি কাজ না মিটিয়ে সোমবারই দেশে ফিরে এসেছেন। জালালউদ্দিন বলেন, ‘‘বাসে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু পর্যন্ত যেতে পেরেছিলাম। অশান্ত পরিস্থিতির কারণে সেই বাসেই আবার ফিরে এসেছি। আগে তো বাঁচতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy