পেট্রাপোল থানার জয়ন্তীপুর উত্তরপাড়ার গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে মজে যাওয়া হাঁকোর খাল। ও পারে বাংলাদেশের সাদিপুর গ্রাম। অরক্ষিত সীমান্ত, নেই কাঁটাতারের বেড়া। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বলতে মজে যাওয়া কোদালিয়া নদী! নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে সহজেই যাতায়াত করা যায়। বছরের একটা সময়ে নদী কার্যত জলশূন্য থাকে। তখন যাতায়াত আরও সহজ। কোদালিয়ার ও পারে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার মাটিলিয়া। এ পারে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার রণঘাট পঞ্চায়েতের বাগপাড়া। এই এলাকায় দু’দেশের সীমানায় কাঁটাতার নেই। উত্তর ২৪ পরগনার অনেক অংশেই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়তে পারতে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ উদ্বিগ্ন। এক বাসিন্দার কথায়, “স্বাভাবিক সময়েও বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা দা-হাঁসুয়া নিয়ে এসে হাঁস-মুরগি, গরু চুরি করে নিয়ে যায়। অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে কী হবে, তা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন।” তাঁদের দাবি, সর্বত্র কাঁটাতারের বেড়া থাকলে নিশ্চিন্তে থাকা যেত।
তবে কাঁটাতারের বেড়া না থাকলেও সীমান্তে বিএসএফ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। দিন কয়েক আগে বিএসএএফের ডিজি দলজিৎ সিংহ চৌধুরী পেট্রাপোল এবং রণঘাট সীমান্ত পরিদর্শন করে গিয়েছেন। তিনি বিএসএফকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার বলে গিয়েছেন। সূত্রের খবর, সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। আউট পোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। টহলও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে।সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বর্ডার রোডে সন্ধে সাড়ে ৭টার পরে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বিএসএফের পক্ষ থেকে। সীমান্তে বসবাসকারী মানুষজনকে অনুরোধ করা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা যেন রাতে বাড়ি থেকে না বেরোন।
পাশাপাশি, গ্রামবাসীর সঙ্গে বিএসএফ নিয়মিত বৈঠক করছে। সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এলাকায় অচেনা বা সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেলে খবর দিতে বলা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে থাকা পাটখেত দ্রুত কেটে ফেলতে আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের পক্ষ থেকে ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করা হচ্ছে। আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বনগাঁর জয়ন্তীপুর উত্তর এলাকায় বাড়ি বৃদ্ধ জিয়াদ আলি সর্দারের। বাড়ির পিছনে হাকোর নদী। নদীর ও পারে কিছু অংশ ভারতের মধ্যে। তারপরেই বাংলাদেশের সাদিপুর। জিয়াদের বাড়ি থেকে সাদিপুরে বিজিবি-র (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) শিবির দেখা যায়। জিয়াদের কথায়, “এখানে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। তবে বিএসএফ এখন নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। মাছিও গলতে দিচ্ছে না। আমরা নির্ভয়েই আছি।”
তবে জিয়াদের মতো নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না সকলে। মানবপাচার (স্থানীয় ভাবে বলে ধুর পাচার) দীর্ঘ দিনের সমস্যা। স্বাভাবিক সময়ে ধুর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ রমরমিয়ে চলে। অতীতে এই জেলার বনগাঁ ও বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশেরও ঘটনা ঘটেছে।
সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা জমিজট। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন সেই সমস্যা অনেকটাই মেটানো গিয়েছে। জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, “জেলার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া জন্য জমি কেনার কাজ চলছে। বেশ কিছু জমি কেনাও হয়ে গিয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সীমান্তে জমি কিনে তা বিএসএফকে হস্তান্তর করা হবে। তারপরে বিএসএফ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেবে। জেলায় স্থলসীমান্তের পাশাপাশি ১৬৫ কিলোমিটার জলসীমান্ত আছে। সেখানেও বিএসএফ টহল বাড়িয়েছে। গাইঘাটা ব্লকে ২২ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতার নেই ৫ কিলোমিটার অংশে। বাসিন্দারা চান, দ্রুত সেখানে কাঁটাতার বসুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy