উমাশঙ্কর সিংহ
বিরোধটা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। কখনও কখনও প্রকাশ্য বিরোধ বাধছিল দুই শিবিরে। শেষ পর্যন্ত বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে সরিয়েই দেওয়া হল ফাল্গুনী পাত্রকে। দলের অন্দরে গুঞ্জন, ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের সঙ্গে বিরোধের জেরেই সরতে হল তাঁকে। তবে প্রকাশ্যে তেমন কথা স্বীকার করেননি কেউই।
ফাল্গুনীকে সরিয়ে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হল প্রবীণ উমাশঙ্কর সিংহকে। বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তাঁর অন্য পরিচয়ও রয়েছে। তিনি অর্জুন সিংহের আত্মীয়। গত কয়েক বছরে দলের কর্মসূচিতে তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। বিজেপির অন্দরে গুঞ্জন, এর পর থেকে ব্যারাকপুরে বিজেপি একই পরিবার থেকেই পরিচালিত হবে।
গত বিধানসভা ভোটের সময়ে ব্যারাকপুর সাগঠনিক জেলার সভাপতি পদে ছিলেন অহীন্দ্র বসু। সেই ভোটের পর তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই পদে আনা হয়। এক বছরের মধ্যেই তাঁকে সরানো হয়। তার পরেই ওই পদে আসেন ফাল্গুনী। গত দু’বছর ধরেই তিনি ওই পদে ছিলেন। তাঁর সময়ে দল ব্যারাকপুরে ভাল ফল করা সত্ত্বেও কেন তাঁকে সরানো হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা। ফাল্গুনী নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘দল যেটা ভাল বুঝেছে, করেছে। এতে দলের নিশ্চয়ই ভাল হবে।’’
অর্জুন দীর্ঘ দিন ধরেই ভাটপাড়ার বিধায়ক ছিলেন। পুরপ্রধান পদেও ছিলেন তিনি। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূলে ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে টিকিট পেয়ে যান। ভোট পর্বে অর্জুনের সঙ্গে সদ্ভাবই ছিল ফাল্গুনীর। গোল বাধে ভোটের পরে। অর্জুন জেতার পরে তাঁর হাত ধরে তৃণমূল থেকে অনেকেই বিজেপিতে যান। ক্রমে এলাকাতে তাঁরাই বিজেপির ‘নেতা’ হয়ে উঠতে শুরু করলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন পুরনো বিজেপি কর্মীরা। তার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়।
বিজেপি সূত্রে খবর, তৃণমূল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফাল্গুনীর কাছে রোজই নানা অভিযোগ আসতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে তিনি অর্জুনের সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করেন। তাতে ফল উল্টো হয়। এরই মধ্যে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সব ক’টি মণ্ডলের সভাপতি নির্বাচন শুরু হয়। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম মানা হয়নি। রাজ্য নেতৃত্বকে বাড়িতে ডেকে বৈঠক করে এক তরফা সব ক’টি মণ্ডলের সভাপতি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, সব ক’টি পদেই নিজের পছন্দের লোক বসিয়েছিলেন ফাল্গুনী। যদিও ফাল্গুনী সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
সে দিনই ফাল্গুনীর নৈহাটির বাড়িতে হামলা হয়। প্রচুর লোক তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। অভিযোগ অর্জুনের লোকেরাই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। যদিও অর্জুন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। দলীয় সূত্রে খবর, তার পরেই অর্জুন দলের উপর মহলে ফাল্গুনীর নামে নালিশ ঠুকেছিলেন।
দলের নেতাদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, এমনিতেই বিজেপিতে অর্জুনের প্রভাব ভাল। তার উপরে ফাল্গুনী সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদেরও চটিয়ে ফেলেছিলেন। ফলে এই পর্বে সঙ্ঘের সমর্থনও জোটেনি বলে তাঁর ভিত আলগা হয়ে গিয়েছিল।
পরের প্রশ্ন ছিল, ফাল্গুনীকে সরালে ওই পদে কে বসবে। দলীয় সূত্রে খবর, তখনই কৌশলে উমাশঙ্করের নাম ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে উমাশঙ্কর বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন। গত কয়েক বছরে এই প্রবীণ নেতাকে তেমন দলের সভা-সমিতিতে বিশেষ দেখা যায়নি। সেই তাঁকেই এই পদের জন্য বেছে নেওয়ার মধ্যে কোন সমীকরণ কাজ করেছে তা স্পষ্ট। উমাশঙ্কর বলেন, ‘‘দল আমাকে বড় দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সেই দায়িত্ব ভাল ভাবে পালন করতে চাই।’’ অর্জুন বিতর্ক নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। অর্জুন যদিও বলছেন, ‘‘আমি সাংসদ, জনপ্রতিনিধি। দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আমার কোনও হাত নেই। দল যাঁকে সভাপতি করবে, আমি তাঁর অধীনেই কাজ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy