সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্বজিৎ দাস —নিজস্ব চিত্র
মুকুল রায়ের বিজেপি ত্যাগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘বেসুরো’ বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। শুক্রবার বনগাঁয় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ডাকা বৈঠকে দলের যে তিন বিধায়ক গরহাজির ছিলেন তার অন্যতম বিশ্বজিৎ। বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে বিশ্বজিতের সাফাই, যে ব্যক্তির বাড়িতে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল তিনি বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মুকুল ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিতের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। মুকুলের তৃণমূলে যোগদানের পর পরই বিশ্বজিতের এ হেন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার বনগাঁর খয়রামারিতে দলীয় নেতা জ্ঞান ঘোষের বাড়িতে বৈঠক করেন দিলীপ। ওই বৈঠকে ছিলেন না বাগদার বিধায়ক। গরহাজির ছিলেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া। ছিলেন না বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও। এ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে।
শুক্রবার মুকুল যখন পদ্মশিবির ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দিতে তৃণমূল ভবনে পৌঁছেছেন তখন বনগাঁয় বিজেপি-র সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে হাজির হন দিলীপ। কিন্তু ওই বৈঠকে ছিলেন না বাগদার বিজেপি বিধায়ক। অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে ছিলাম। এক জন কী ব্যবসা করেন জানি না, তিনি নিজের স্বার্থের জন্য তাঁর বাড়িতে রাজ্য সভাপতিকে নিয়ে এসেছেন। তিনি (দিলীপ)ও জানেন না কোথায় এসেছেন। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতি করছেন তাঁরা যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন না। ওই জায়গায় যাওয়া আমাদের মতো মানুষের পক্ষে উচিত নয়। আমার সঙ্গে দিলীপদার কথা হয়নি। এমন একটা বাড়িতে বৈঠক হয়েছে যার মালিক নানা রকম অবৈধ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বলে শোনা যায়।’’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থাৎ রাজ্যে ভোটের আগে, বিধানসভার শেষ অধিবেশনের দিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়া বিশ্বজিৎ। মমতার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তিনি। বিশ্বজিৎকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কী রে কী ডিসিশন নিলি?’’ সেই সময় স্মিত হেসে মুখ্যমন্ত্রীর কথার কোনও জবাব দেননি বিশ্বজিৎ। বিশ্বজিতের সঙ্গে ছিলেন আরও এক দলত্যাগী নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিংহ। যদিও এ বারের ভোটে জয়লাভ করেননি সুনীল। সেই বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘মুকুল রায়ের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। তবে সেটার সঙ্গে রাজনীতিকে না জড়ানোই ভাল। আমার সঙ্গে দিদিরও ভাল সম্পর্ক। খুব স্নেহ করেন, ভালবাসেন। ওঁর সঙ্গে কথা এখনও হয়নি। বিধানসভা খুললে নিশ্চিত ভাবেই কথা হবে। উনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আমারও মুখ্যমন্ত্রী। আমার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ভাল সম্পর্ক। কিন্তু রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক নয়। আগামী দিন ঠিক করবে আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।’’
মুকুলকে নিয়ে বিশ্বজিতের উপলব্ধি, ‘‘দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার পরেই মুকুল রায়ের স্থান। উনি একটা বড় নাম। এমন একটা বড় মাপের মানুষ দলবদল করলে তা একটা ধাক্কা। এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, লোকসভা, পঞ্চায়েতে মুকুলদা কাজ করেছেন। তবে বিধানসভায় কাজ করতে পারেননি বলে মনোক্ষুণ্ণ ছিলেন। তাঁকে কাজের সুযোগ দিলে তিনি রাজ্যের ক্ষেত্রে একটা বড় ব্যাপার। উনি বলেছেন, কেন চলে গিয়েছেন জানাবেন। আমরা তার অপেক্ষায় থাকব।’’
দিলীপের ওই বৈঠকে ছিলেন না বনগাঁ উত্তরের বিধায়কও অশোকও। তাঁর সাফাই, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আমার ডায়াবেটিস আছে।’’ তবে মুকুলকে নিয়ে ভিন্ন সুর তাঁর গলায়। অশোকের উপলব্ধি, ‘‘মুকুল রায় নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসেছিলেন। স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারেননি, তাই ফিরে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy