Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বিষ মিশছে বিদ্যাধরীর জলে

প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। কয়েকবার যশোর রোড অবরোধও করেছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যার কথাটা প্রশাসনের কানে ঢুকছে না বলেই অভিযোগ তাঁদের। 

দূষিত: বর্জ্য মিশে কালো হয়ে গিয়েছে নদীর জল। ছবি: সুজিত দুয়ারি

দূষিত: বর্জ্য মিশে কালো হয়ে গিয়েছে নদীর জল। ছবি: সুজিত দুয়ারি

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৬
Share: Save:

কারখানার বর্জ্যে দূষণ ছড়াচ্ছে নদীর জলে। স্নান সারা যাচ্ছে না। ঘরের কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না সেই জল। মরে যাচ্ছে মাছ। চাষের কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না দূষিত সেই জল।

প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। কয়েকবার যশোর রোড অবরোধও করেছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যার কথাটা প্রশাসনের কানে ঢুকছে না বলেই অভিযোগ তাঁদের।

বারাসত সংলগ্ন তিনটি থানা এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু কারখানা। সেখানে রং ব্যবহার করা হয়। ওই সব কারখানার বর্জ্য পড়ছে বিদ্যাধরী নদীতে। অবস্থা এমন হয়েছে, নদীর জল কালো হয়ে গিয়েছে। দেখা দিচ্ছে চর্মরোগ। দুর্গন্ধের চোটে শ্বাসকষ্টে ভুগছে অনেক শিশু।

২১ ফেব্রুয়ারি বিড়ার চৌমাথা সংলগ্ন দু’টি কারখানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। পুলিশ সরিয়ে দিলে বিক্ষোভকারীরা যশোর রোড অবরোধ করে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বিদ্যাধরীর জলে উত্তর ২৪ পরগনার হাজার হাজার কৃষক চাষআবাদ করেন। কারখানার জন্য সেই জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। চাষের জমিতে সেই জল ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নদী পাড়ের চাষিরা। বিদ্যাধরীর জল দূষণমুক্ত করার দাবিতে এলাকার মানুষ জানুয়ারিতেও অবরোধ, বিক্ষোভ করেছিলেন। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সে সময়ে লিখিত আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল সমস্যা মেটানো হবে বলে। ঘটনার পরে দিন কয়েক কারখানার বর্জ্য নদীতে পড়ছিল না। ফের দূষিত জল মিশছে জলে। ঘটনাটি জেনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের’ চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ জানালেই কারখানাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’ বারাসতের মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাসও বলেছেন, ‘‘কারখানাগুলি নিয়ম-কানুন মেনে চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অভিযোগ অমূলক নয়। বিদ্যাধরী নদীপাড়ে দত্তপুকুর ও অশোকনগর থানা এলাকায় গেঞ্জি কারখানা এবং দেগঙ্গার ক্ষুদ্রমন্ডলগাঁতির আর একটি কারখানা থেকে বর্জ্য মিশছে বিদ্যাধরীর জলে। নদীর জল কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

দত্তপুকুর থানা এলাকায় বিদ্যাধরীর একপাশে রাউতারা, অন্য দিকে বাঁকপুল গ্রাম। সেখানে কয়েকটি ছোট-বড় গেঞ্জি কারখানা রয়েছে। কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল-সহ বর্জ্য বিদ্যাধরীতে পড়ে দূষিত হচ্ছে জল। স্থানীয় বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘দুর্গন্ধে বাড়িতে টেকা যাচ্ছে না। খাওয়া-দাওয়া করা যাচ্ছে না। আশেপাশে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’ দেগঙ্গার সোহায় শ্বেতপুর পঞ্চায়েত দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যাধরীর দু’ধারে রয়েছে হাজার হাজার বিঘে কৃষিজমি। সেখানে কাউরাকুড়েরবিল এলাকাটি বর্ষার জলে অধিকাংশ সময়ে ডুবে থাকে। শীতকালে জল নেমে যাওয়ায় চাষিরা আনাজের পাশাপাশি আলু ও সর্ষে চাষ করেন। জব্বার আলি বলেন, ‘‘এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যাধরীর জলই পাম্প চালিয়ে এনে চাষে ব্যবহার করি। কিন্তু তাতে সমস্যা হচ্ছে।’’ মইদুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘নদীর জল কালো হয়ে গিয়েছে। জমিতে দেওয়ার পরে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’ সোয়েব আলি বলেন, ‘‘কারখানার সমস্ত নোংরা নদীতে ফেলায় এই বিপত্তি।’’ মসিউর রহমান, পলাশ গাইনদের মতো কৃষকের হাতে-পায়ে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। তাঁরা জানান, বিদ্যাধরীর জল ব্যবহার করতেই ভয় পাচ্ছেন সকলেই।

ক্ষোভ ছড়িয়েছে মৎস্যজীবীদের মধ্যেও। অধীন ঘোষ বলেন, ‘‘বিদ্যাধরীর জলস্রোতে জাল ফেলে কত মাছ ধরেছি। এখন জলে আর মাছ মিলছে না।’’ মহাদেব গাইন বলেন, ‘‘ভোর হতেই ডিঙি ও জাল নিয়ে কত মানুষ ভিড় জমাতেন বিদ্যাধরীতে। এখন কেউ আর আসেও না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bidyadhari River Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy