প্রতীকী ছবি
ধান আর পান নিয়েই তাঁদের জীবনযাত্রা। ধানের খেত, কিন্তু পান বরজকে ‘পানবাড়ি’ বলেন সাগরদ্বীপের বাসিন্দারা। আমপানের তাণ্ডবে সে পানবাড়ি তছনছ। কোনও পান বরজই আর দাঁড়িয়ে নেই। পানপাতা ফেলে দিতে হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেক চাষি প্রায় নিঃস্ব। এই অবস্থায় ক্ষতিপূরণের আশ্বাসে অনেকেই বুকে বল পেয়েছিলেন কিছুটা।
জেলা উদ্যানপালন দফতর অবশ্য জানিয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে চাষিদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আইএফএসসি নম্বর ভুল থাকার জন্য টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। যদিও চাষিদের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, অন্যান্য ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি শুরু হলেও পান বরজের ক্ষতিপূরণের ফর্মই মিলছে না। পানচাষি সংগঠনেরও অভিযোগ তেমনই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। যার সিংহভাগই কাকদ্বীপে-সাগরদ্বীপে। জেলায় পানচাষি প্রায় ৬০ হাজার। গোসাবা এবং বাসন্তী ব্লকে কিছু এলাকায় পান চাষ হয়। তবে এই দুই ব্লকের পান চাষিরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গিয়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ ব্লকের অন্যতম অর্থকরী ফসল পান। সাগরদ্বীপে প্রায় প্রতিটি পরিবারই পান চাষের সঙ্গে যুক্ত। এখানে ধানের পরে সব থেকে বেশি জমিতে পানের চাষ হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, গত নভেম্বরে বুলবুল ঝড়ে ব্লকের প্রায় সব পান বরজ ভেঙে পড়েছিল। তখনও পান বরজ পিছু ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। মার্চ মাস পর্যন্ত চাষিরা সেই টাকা পাননি বলে জানিয়েছেন। তারপরেই লকডাউন এবং তার মধ্যেই ফের আমপানের তাণ্ডব। বুলবুলের পরে অতিকষ্টে দাঁড় করানো বরজ ঝড়ে মাটি নিয়েছে। লকডাউনের জেরে পানের পাইকারি বাজার প্রায় বন্ধ থাকায় চাষিরা এমনিতেই সঙ্কটের মধ্যে ছিলেন। তার পরে এমন বিপর্যয় দিশেহারা চাষিরা।
সাগরের পানচাষি অমর দলুই, সাগর দাসেরা ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, এক একটা পানের বরজ তৈরি করতে এক লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়। বুলবুলের পরে অনেকেই ধার দেনা করে বরজ তৈরি করেছিলেন। আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের ফের পাঁচ হাজার এবং যে সমস্ত পান চাষির জব কার্ড রয়েছে, তাঁদের আরও ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিপূরণের ফর্মই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
সারা বাংলা পান চাষি সমিতির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন জানা বলেন, “ব্লক অফিস থেকে আমাদের পঞ্চায়েতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। পঞ্চায়েতেও যথেষ্ট সংখ্যক ফর্ম নেই। তা হলে ক্ষতিপুরণ পাব কী করে?” কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চাষিরা পঞ্চায়েতে আবেদনপত্র না পেলে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
ক্যানিং মহকুমার মধ্যে গোসাবা ব্লকে প্রায় ৩০০টি পানের বরজ ছিল। বিশেষ করে গোসাবা, রাঙাবেলিয়া ও বালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই পান বরজের সংখ্যা বেশি। চাষির সংখ্যা ২৪০ জন। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, সকলেই ক্ষতিপূরণের পাঁচ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন। বাসন্তী ব্লকের ৬০টি পান বরজের মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিডিও সৌগত সাহা।
বাসন্তীর ভরতগড় এলাকার পানচাষি পিন্টু অধিকারী আবার জানান, আবেদন করলেও তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। তিনি জানান, ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ১৮ কাঠা জমিতে দু’টি পান বরজ তৈরি করেছিলেন। ঝড়ে পুরোটাই মাটিতে মিশে গিয়েছে। গাছ বাঁচাতে ইতিমধ্যে বরজ মেরামত করতে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। সরকারি সাহায্য পেলে কিছুটা তাঁর কিছুটা সুরাহা হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy