কোনও নেতা প্রাণহানির আশঙ্কায় ভুগছেন।
কেউ হামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আস্তানা গেড়েছেন।
অনেকে আবার দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নামে গরিব মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিকাশ সিংহ এবং তাঁর অনুগামী, দলের বসিরহাট কার্যালয়ের সেক্রেটারি সুজিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। দলের পক্ষ থেকেও আলাদা ভাবে তদন্ত হচ্ছে বলে আগে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দল বিকাশবাবু-সহ অভিযুক্ত পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় ক্ষুব্ধ বসিরহাটের বিজেপি নেতৃত্বের একটা বড় অংশ। তাঁরা মনে করছেন, টাকা দিয়েও ঘর না-পেয়ে গরিব মানুষের ক্ষোভ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে তাঁদের উপরে হামলা হতে পারে।
ওই নেতাদের দলে রয়েছেন হিঙ্গলগঞ্জের মণ্ডল সভাপতি জয়দেব বর্মন। ওই প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি এলাকার ১২০০ পরিবারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা তুলে বিকাশবাবুকে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিকাশবাবুর কথামতোই টাকা তুলেছিলাম। এখন টাকা ফেরত বা ঘর— কিছুই দিতে না-পারায় গ্রামবাসী যে ভাবে ক্ষিপ্ত, তাতে জীবনহানির আশঙ্কা করছি।’’ ইতিমধ্যেই ডাক বিভাগের মাধ্যমে বসিরহাট থানা এবং জেলার পুলিশ সুপারের কাছে বিকাশবাবু এবং সুজিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন তিনি।
বসিরহাটের নিমদাঁড়িয়া-কোদালিয়া পঞ্চায়েতের ঘুসুড়ি গ্রামের বিজেপি নেতা সঞ্জয় দাস বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন। তিনিও গরিব মানুষের থেকে টাকা তুলে বিকাশবাবুকে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিকাশবাবুর কথায় চারশোরও বেশি পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফর্ম পূরণ করেছি। এখন বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না।’’
বস্তুত, ঘুসুড়ি গ্রামের ময়না দাস, কল্পনা দাস, মালতি দাসের মতো গরিব মানুষগুলো ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ঘর পাওযার স্বপ্ন দেখেছিলেন। অনেকেই নিজেদের দিনমজুরির জমানো টাকাও দিয়েছিলেন ফর্ম পূরণের জন্য। এখন তাঁদের চোখে শুধুই শূন্যতা। বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। কিছুদিন আগেই দলের রাজ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে বিজেপির বসিরহাট জেলা নেতৃত্বের একাংশ বিকাশবাবুদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ জানান। একই অভিযোগ জানানো হয় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার যে ফর্মে শহরের গরিব মানুষের বাড়ি পাওয়ার কথা, বিকাশবাবু তা বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের দিয়ে পূরণ করিয়েছেন। গরিব গ্রামবাসীদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে এনে ওই প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার ‘মিথ্যা’ স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁদের থেকে টাকাও তুলেছেন। বিকাশবাবু আগেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। সোমবার তাঁর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য ওই অভিযোগকে ‘চক্রান্ত’ বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি হয়ে থাকলে বিকাশ সিংহরা কোনও ভাবে যুক্ত নন। দলকে বদনাম করতে নিশানা করে ব্যক্তিকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হয়েছে। দলেরই একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই চক্রান্ত করেছেন।’’
গোটা ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বলে, তাদের দলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কই তেমনটা তো হতে দেখছি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy