জমা-জল এখানেই বংশ বাড়ে মশার। —নিজস্ব চিত্র
জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে বনগাঁ মহকুমা জুড়ে। ইতিমধ্যেই দু’জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে মানুষ এখনও সচেতন হননি।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত ৬৫জন রোগী ভর্তি আছেন। জ্বরে আক্রান্ত আরও ২০০জন ভর্তি রয়েছেন। রোজই ১০-১৫ জন মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।’’
প্রশাসনের তরফে মশা মারতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। জ্বর-ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের জন্য এলাকায় শিবির করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদিও ডেঙ্গি নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়েনি। বাড়ির মধ্যে ডোবা। তাতে বৃষ্টির জল জমে আছে। রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। নিকাশি নালার মধ্যে জমে আছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও আবর্জনা।
হাসপাতাল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ অগস্ট সকালে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে মারা গিয়েছেন জ্বরে আক্রান্ত অসীমা সরকার (৩০)। বাড়ি বনগাঁ ব্লকের গোপালনগর থানা এলাকার চৌবেড়িয়া এলাকায়। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘অসীমার মৃত্যুর পরে তাঁর রক্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ছিলেন।’’ তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে অবশ্য ডেঙ্গির উল্লেখ নেই।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অসীমার মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, জল জমে আছে। সে সব পরে সাফ করা হয়। ওই এলাকায় বন-জঙ্গল সাফাই করা হয়েছে। নিয়মিত মশা মারা হচ্ছে। বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘চলতি বছরে বনগাঁ ব্লকে এখনও পর্যন্ত ৫০ জন মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে গত সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। মৃত অসীমা কয়েক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে এসেছিলেন মৃত্যুর আগের দিন। মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ ব্লকে মূলত পাল্লা ও চৌবেড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছে।
তবে মহকুমার সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি গাইঘাটা ব্লকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরসুমে সরকারি ভাবে ৭৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা আরও বেশি। মূলত ধর্মপুর ১, ধর্মপুর ২, জলেশ্বর ২, সুটিয়া ও রামনগর পঞ্চায়েত এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। ব্লকের ঘোঁজা এলাকার বাসিন্দা বিজলি সরকার (৫২) নামে এক মহিলা ১ অগস্ট বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যু শংসাপত্রে ডেঙ্গির উল্লেখ ছিল।
বিএমওএইচ ভিক্টর সাহা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই সাতটি শিবির করে জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়েছে। চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালেই ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’
তবে এলাকায় দেখা গেল, নিকাশি নালায় আবর্জনা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, থার্মোকল পড়ে আছে। বাড়ির মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ডোবায় জল জমে আছে। তাতে মশার লার্ভা ভাসছে। ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার হয়নি। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘মশা মারার তেল, চুন, ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। কামান দাগা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
বাগদা ব্লকেও জ্বর ছড়িয়েছে। বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার বলেন, ‘‘বাগদা ব্লকে এখনও পর্যন্ত কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় গ্রাম ঘুরে দেখছেন যদিও সাধারণ মানুষের দাবি, পঞ্চায়েত বা প্রশাসন থেকে নিয়মিত এলাকায় মশা মারা হচ্ছে না। আগে তো কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। জ্বর-ডেঙ্গি ছড়ানোর পরে এখন সকলে নড়েচড়ে বসেছেন। আগেভাগে পদক্ষেপ করা হলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy