হাসানুর মোল্লা। —নিজস্ব চিত্র
সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে আগেই মৃত্যু হয়েছিল দুই দাদার। এ বার মৃত্যু হল ভাইয়ের। মৃতের নাম হাসানুর মোল্লা (৪০)। তাঁর বাড়ি মিনাখাঁ থানার গোয়ালদহ গ্রামে। দীর্ঘদিন তিনি সিলিকোসিসে ভুগছিলেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই নিয়ে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ওই এলাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে আঠাশ হল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দশ বছর আগে আয়লায় তছনছ হয়ে যায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম। বহু মানুষ ও গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়। নদীবাঁধ, ঘর-বাড়ি ভাঙে। ভেসে যায় গাছ-গাছালি। রাতারাতি মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। মিনাখাঁর গোয়ালদহ, দেবীতলার কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ কাজের খোঁজে আসানসোলে যান। সেখানে পাথর ভাঙার কারখানায় কাজ করতেন তাঁরা। সেখান থেকেই সিলিকোসিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হন তাঁরা।
২০১০ সাল থেকে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হওয়া মানুষগুলি বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। গোয়ালদহের বাসিন্দা আখেরআলি মোল্লার তিন ছেলে। মিজানুর মোল্লা, মুজাফর মোল্লা ও হাসানুর মোল্লা। আসানসোল থেকে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনজনই। সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালে মারা যান মোজাফর মোল্লা। এক বছর পর মৃত্যু হয় মিজানুর মোল্লার।
এ দিন সকালে মারা গেলেন হাসানুর মোল্লা। তিন ছেলের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ আখের আলি। তিনি বলেন, ‘‘সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে চোখের সামনে একের পর এক ছেলে মারা গেল। কিছুই করতে পারলাম না।’’ পুলিশ জানায়, গত তিন দিন আগে হাসানুরের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁকে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিলিকোসিসে আক্রান্ত হাসানুরের সেখানেই মৃত্যু হয়।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু বছর ধরে সিলিকোসিসে ভুগছিলেন হাসানুর মোল্লা। গুরুতর অসুস্থ থাকায় কোনও কাজ করতে পারতেন না তিনি। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় স্ত্রী হাসিনা বিবি কাপড়ে জরির কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাতেন। তাঁদের দুই সন্তান। হাসিনা বিবি বলেন, ‘‘মেয়ে-মা মিলে কাপড়ে জরির কাজ করে কোনও রকমে সিলিকোসিসে আক্রান্ত স্বামীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধ কিনতাম। সরকারি ভাবে ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে হয়তো মানুষটা আরও কিছুদিন আমাদের মধ্যে থাকতেন।’’ মুজাফরের মৃত্যুর পর সরকারি ভাবে চার লক্ষ টাকা সাহায্য পেয়েছিল মৃতের পরিবার।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে সাহায্য নিয়ে সিলিকোসিসে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। তাঁদের দাবি, এখনও পর্যন্ত ওই এলাকার বাসিন্দা দেবু মণ্ডল, রহমান মোল্লা, নাসিরউদ্দিন মোল্লা-সহ ৫ জন জনের অবস্থা গুরুতর। তা ছাড়া অন্তত পঁচিশজন সিলিকোসিসে ভুগছেন। মিনাখাঁর বিডিও কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিলিকোসিসে মৃত্যুর জন্য সরকারের নিয়ম মতো যেমন আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কথা তেমন যাতে পান, সে জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলায় পাঠিয়ে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy