প্রতীকী ছবি।
আর্সেনিক-আক্রান্ত গোষ্ঠ দাসের মৃত্যুর পরে এলাকার আর্সেনিক দূষণে অসুস্থেরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকার যদি আমাদের চিকিৎসা ও ওষুধের যথাযথ ব্যবস্থা না করে তা হলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনও উপায় থাকবে না।’’
শুক্রবার সকালে গোষ্ঠর বাড়িতে তাঁর স্ত্রী দেবলা বলেন, ‘‘প্রায় ২০ বছর ধরে আর্সেনিকে ভুগছিলেন আমার স্বামী। আমরা বাড়ির টিউবওয়েলের জলই খেতাম। তা থেকেই আর্সেনিকের বিষ ওঁর শরীরে ঢোকে। শেষ ৬ মাসে অসুস্থতা বেড়েছিল। পিজি, আরজিকর-সহ কলকাতার বড় বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি।’’ গোষ্ঠর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে খেতমজুরের কাজ করলেও অনেকদিনই তিনি কোনও কাজকর্ম করতে পারতেন না। দুই ছেলের আয়েই কোনও মতে সংসার চলত তাঁদের। এলাকাবাসীর বক্তব্য, আর্সেনিক-বিষে এই নিয়ে পরপর চার জনের মৃত্যু ঘটল। কিন্তু আজও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা হল না এই এলাকায়। তাঁরা জানান, গভীর পানীয় জলের কল গোষ্ঠদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। স্থানীয় এক মহিলার কথায়, ‘‘বাধ্য হয়ে আমরা বাড়ির টিউবওয়েলের জলই পান করি। গভীর নলকূপ বসানোর জন্য জমি দিতে চেয়েছি। কিন্তু এখনও নলকূপ বসানো হয়নি।’’
‘আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’র তরফে অসুস্থদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া এবং বিশুদ্ধ আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের দাবিতে মার্চ মাসে গাইঘাটা বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছিল। কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি পেশ করা হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এলাকায় একবারই আর্সেনিক আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা-শিবির করা হয়ছিল। আর ব্লক প্রশাসনের তরফে রোগীদের মাথা-পিছু ১২ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল।’’ অশোক আরও জানান, আর্সেনিক দূষণে অসুস্থদের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি প্রোটিন ও ভিটামিন-যুক্ত খাবারও খেতে হয়। যা গোষ্ঠদের মতো গরিবের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং ভিটামিন-যুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তিনজনের মৃত্যুর পরে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিষ্ণুপুর এলাকায় আর্সেনিকে আক্রান্তদের জন্য সমীক্ষা হয়েছিল। তাঁরা পানীয় হিসেবে কোন জল ব্যবহার করেন, কী খান, ওষুধপত্র কী খাচ্ছেন— সে সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময়ে বিষ্ণুপুর এলাকায় ৭৫ জন আর্সেনিক আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে শিবিরও করা হয়েছিল। ভিক্টর বলেন, ‘‘সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে।’’ এত কিছুর পরেও কেন ঠেকানো যাচ্ছে না আর্সেনিকে মৃত্যুমিছিল? আক্রান্তেরা জানান, আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের শরীরে আরও নানা জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে। সে সবের যথাযথ চিকিৎসা এবং ওষুধও মিলছে না। জুটছে না পুষ্টিকর খাবারও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়েছে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘আর্সেনিক সমস্যা মেটাতে বিষ্ণুপুর বাজারে ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ করা হয়েছে। শীঘ্রই সেটি চালু হবে। আরও কয়েকটি আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ বসানো হবে। এলাকায় একটি প্লাস্টিকের কারখানা রয়েছে। সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের ত্রাণও দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy