সুন্দরবনের কুলতলিতে বাঘ-মানুষ সংঘাত কমাতে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করেছে তারা। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ‘ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’ (ডব্লিউটিআই) এ বার পশ্চিমবঙ্গ বনবিভাগ এবং লোকমাতা রানি রাসমণি মিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত ও সহাবস্থান’ সংক্রান্ত একটি কর্মশালার মাধ্যমে বাদাবন লাগোয়া গ্রামগুলির সমস্যার কথা তুলে ধরল শহরে। সেখানে হাজির ছিলেন বাংলাদেশের সুন্দরবনের প্রতিনিধিরাও।
অনুষ্ঠানে মূল আলোচনার বিষয় ছিল, কী ভাবে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাত নিরাময় করা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সহাবস্থানের আবহ তৈরি করা যায়। জুওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, আইইউসিএন-ভারত, আইবিসিএ, ওয়াইল্ডটিম-বাংলাদেশ, এনআইটি রৌরকেল্লার বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরা। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বহু মানুষ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন মধু, কাঁকড়া, মাছের উপর নির্ভরশীল এবং এই বনজ সম্পদ আরোহণের সময়ই বনজীবীরা বাঘের মুখোমুখি হন। এছাড়া বহুক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাঘ জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে চলে আসে যা সংঘাতের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
ডব্লুইটিআই, লোকমাতা রানি রাসমনি মিশন, পশ্চিমবঙ্গ বনবিভাগ, আইইউসিএন, জার্মান কোঅপারেশন কেএফডব্লিউ-এর সহযোগিতায় বিগত ছ’বছর ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ব্লকে মানুষ-বাঘ সংঘাত নিরাময় ও সহাবস্থান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে। তাদের অভিজ্ঞতা বিগত আড়াই দশক ধরে সুন্দরবনে লাগানো নাইলন জাল গ্রামে বাঘের প্রবেশ রোধে যথেষ্টভাবে সফল হয়েছে। এ ছাড়া জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের নদীবাঁধে সৌরবাতি লাগানো হয়েছে। যা বাঘ-সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর গ্রামে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিরোধক হিসেবে কার্যকর। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশেষত কুলতলি এলাকায় গ্রাম এবং জঙ্গলের মাঝে একমাত্র ব্যবধান সঙ্কীর্ণ খাঁড়ি হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটছে।
কর্মশালায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্তদের আলোচনায় উঠে আসে কী ভাবে বাঘ সংরক্ষণের এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ করা যায় ও সাধারণ গ্রামবাসীদের এ বিষয়ে সচেতন করা যায়। আলোচনায় অংশ নেন অর্চনা চট্টোপাধ্যায় (আইইউসিএন-ভারত), জিএস ভরদ্বাজ (অতিরিক্ত মহাপরিচালক জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ বা এনটিসিএ)। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বনবিভাগের প্রধান মুখ্য বন্যপাল সন্দীপ সুন্দরিয়াল, সুন্দরবন জীব পরিমন্ডলের অধিকর্তা নীলাঞ্জন মল্লিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের বনাধিকারিক (ডিএফও) নিশা গোস্বামী, যুগ্ম আধিকারিক (এডিএফও) অনুরাগ চৌধুরী ও পার্থ মুখোপাধ্যায়। ছিলেন মৈপিঠ-বৈকুন্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত প্রধান জ্যোৎস্না হালদার, কুলতলি পঞ্চায়েত সমিতির প্রাণী ও মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ পিন্টু প্রধান এবং যৌথ বন পরিচালন সমিতির সদস্যেরাও।