Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

উত্তাল সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছিল যেন

বাইরে প্রবল শব্দ। দরজা-জানলা এঁটেও মনে হচ্ছে, যেন সমুদ্রের ধারে বসে আছি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৬:১৪
Share: Save:

ঝড় আসছে শুনে আমার মেয়ে সকাল থেকে অপেক্ষা করে ছিল। দিনের মধ্যে বার কয়েক প্রশ্ন করেছে, বাবা, ‘‘কখন আসবে ঝড়।’’ সপ্তম শ্রেণির কিশোরীর ধারণা, বেশ একটা দেখার মতো কিছু হতে চলেছে।

কিন্তু ঝড় যখন নিজের সব শক্তি নিয়ে ঢুকে পড়ল এলাকায়, তখন মেয়ে আয়ুষ্কা ভয়ে কাঁপছে। এ বার প্রশ্ন, ‘‘বাবা, ঝড় কখন থামবে!’’

বাইরে প্রবল শব্দ। দরজা-জানলা এঁটেও মনে হচ্ছে, যেন সমুদ্রের ধারে বসে আছি। এমন প্রবল গর্জন। একটা সময়ে মাকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে ঘুমিয়েই পড়ল মেয়ে।

বুধবার সকালে যখন শুনেছিলাম, ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না কথাটা। মনে হচ্ছিল, অন্যবারের মতো এ বারও হয় তো শুধু লেজের ঝাপটটুকুই আসবে পশ্চিমবঙ্গে। অন্তত উপকূল থেকে এত দূর বনগাঁ শহরে নিশ্চয়ই বড় কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না আমপান। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে হারল বিশ্বাস। সত্যি সত্যিই বনগাঁ শহরটাকে যেন উড়িয়ে নিয়ে গেল ঝড়ের দাপট।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর থেকে দাপট বাড়তে থাকল হাওয়ার। সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। পুলিশ সূত্রে জানতে পারলাম, গাইঘাটায় যশোর রোডে একটি দুধের গাড়ি উল্টে গিয়েছে। একটি বাড়ি এবং একটি দোকানের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। জামদানি এলাকায় ডাল চাপা পড়ে জখম হয়েছেন একজন। একটি স্কুলের দরজা ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু এ সবই যেন ছিল সিনেমার ট্রেলার। তখনও পুরো ‘পিকচার’ বাকি।

রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হল আসল দৌরাত্ম্য। রাত তখন ১০টা। ঘরে মোমবাতি জ্বেলে বসে আছি। অন্য জায়গা থেকে মোবাইলে চার্জ করে এনেছিলাম তাই রক্ষে। তখনও সচল মোবাইল সংযোগ। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের ফোন করে ঝড়ের গতিপ্রকৃতি জানার চেষ্টা করছি। পরিচিত অনেকেই ফোন করে আমার কাছ থেকেও তথ্য চাইছেন। সকলেরই প্রশ্ন একটাই, কখন থামবে ঝড়। কিন্তু আশার কথা শুনতে পাচ্ছি না কোনও জায়গা থেকে।

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় জানালেন, বনগাঁয় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ চলছে ঘণ্টায় ১৩২ কিলোমিটার। যথেষ্ট উদ্বিগ্ন মনে হল তাঁকেও। ঘরের দরজা খুলে বাইরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম একবার। দেখলাম, টিনের চাল উড়ছে বাতাসে। ভেসে যাচ্ছে গাছের ডাল। ছিটকে ঢুকে পড়লাম ঘরে। মনে হল, পুরো বাড়িটাই বুঝি উড়ে যাবে ঝড়ে। দূর থেকে ভেসে আসছিল শাঁখ-ঘণ্টার শব্দ। উলুধ্বনি দিয়ে ঝড় তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু কোথায়ও তাণ্ডব কমার কোনও লক্ষণই নেই।ঝড়ের গতি যখন কমল, তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। তবে রাত দেড়টার পরেও চলছিল ঝোড়ো হাওয়া। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা থেকে ধ্বংসলীলার খবর আসছিল কিছু কিছু। কারও বাড়ি ভেঙেছে। কারও বাড়ির উপরে গাছ ভেঙে পড়েছে। উড়েছে টিন-অ্যাসবেস্টসের চাল। পাকা বাড়ির জানলার কাচ তো ঝনঝন করে ভাঙছে, অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই শুনতে পাচ্ছিলাম।

সহকর্মী চিত্র সাংবাদিক নির্মাল্য প্রামাণিক বললেন, বাড়ির একপাশের পাঁচিল ভেঙে গিয়েছে। আমগাছের বড় বড় ডাল ভেঙে পড়েছে।

সকালে বেরিয়ে দেখি, চারপাশটা যেন ধ্বসংস্তূপ। কত কী যে ভাঙা জিনিসপড়ে রাস্তাঘাটে। বিদ্যুতের বহু খুঁটি ভেঙেছে। বড় বড় গাছ শুয়ে পড়েছে। বহু দোকানের হোর্ডিং ভেঙে রাস্তায় পড়ে। মনে হচ্ছিল, বোমারু বিমান এসে তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে এলাকা।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy