সুভাষ চৌধুরী।
করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরলেন বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধ। গত ২৫ দিন ধরে চিকিৎসা চলার পরে অবশেষে ওই বৃদ্ধ বাড়িতে ফেরায় খুশির হাওয়া পরিবারে।
সম্প্রতি টাকি পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা বছর বিরাশির সুভাষ চৌধুরী জ্বরে আক্রান্ত হন। টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই বৃদ্ধের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্টে করোনা পজ়িটিভ পাওয়া যায়। তা জানতে পেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েনন বৃদ্ধ-সহ পরিবারের সকলে। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় সুভাষকে গোপালপুর কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে ফিরেছেন। এই বয়সে করোনা জয় করে বাড়িতে ফিরে আশায় খুশি পরিবারের সদস্যেরা। সুভাষ বলেন, ‘‘ধন্যবাদ জানাই স্বাস্থ্যকর্তাদের। ওঁদের প্রচেষ্টায় আজ আমি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। সব জায়গাতেই চিকিৎসক এবং নার্সেরা ভাল পরিষেবা দিয়েছেন।’’ প্রায় এক মাস সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা হলেও কোনও রকম খরচ হয়নি বলে জানাচ্ছেন বৃদ্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা হয়েছে শুনে প্রথমে খানিকটা ভয় পেলেও মনকে শক্ত করি। বলি, এমন কত ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সারা জীবন। অনেক লড়াই দেখেছি। তাই ঠিক করি, এ লড়াইয়েও হারলে চলবে না।’’
টাকিতে বর্তমানে ৮৩ জন করোনা আক্রান্ত এবং ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে টাকি পুরসভার প্রশাসক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুভাষবাবুর দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় ধন্যবাদ জানাই চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। সুভাষ চৌধুরীর মত বয়স্ক মানুষকে সু্স্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখে অনেক মানুষ মনের জোর পাবেন।’’
এ বিষয়ে বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামলকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘করোনা যুদ্ধে মানুষ যে ভাবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের অভিনন্দিত করছেন, তাতে আমরা অভিভূত। সুভাষবাবুকেও অভিনন্দন।’’ শ্যামল জানান, সম্প্রতি রাত দেড়টা নাগাদ স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী শুভ্রা ঘোষ বসু করোনা আক্রান্ত একজনকে টোটোতে করে নিয়ে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনাভাইরাসকে ভয় পাবেন না। নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়ার মতো কয়েকটি নিয়ম মেনে আমাদের সহযোগিতা করুন।’’ করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেন ন্যাজাটের বাহাত্তর বছরের এক বাসিন্দাও। দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা চলছে ভাগবত দাসের। ন্যাজাট থানার ১০ নম্বর কানমারি গ্রামের বাসিন্দা ভাগবতের জুলাই মাসের শুরুতে জ্বর আসে। ১৬ জুলাই রাজবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে করোনা পরীক্ষা করাতে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠান। ১৯ জুলাই রিপোর্ট এলে দেখা যায়, তিনি করোনা আক্রান্ত।
২০ তারিখ বসিরহাটের আল আমিন কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। ৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা চলার পরে ২৯ তারিখ বাড়ি ফেরেন তিনি। সাত দিন বাড়িতে নিভৃতবাসে ছিলেন। এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। ভাগবত বলেন, ‘‘প্রথমে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় ভেবেছিলাম আর হয় তো বেঁচে ফিরব না। তবে ডাক্তারবাবুরা আমাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে দিলেন।” ভাগবত আরও বলেন, ‘‘বয়স্করা সাবধানে থাকুন। তবে ভয় পাবেন না।’’
তাঁর স্ত্রী অহল্যার বয়স ৬৭। তবে তিনি আক্রান্ত হননি। এ বিষয়ে সন্দেশখালি ১ বিএমওএইচ দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই বৃদ্ধ চিকিৎসকদের পরামর্শ ঠিক মতো মেনে চলেছেন। আমরা খুব খুশি, উনি সুস্থ হয়ে ওঠায়। ওঁকে দেখে অনেক করোনা আক্রান্ত বয়স্ক মানুষ মনের জোর পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy