দেহ উদ্ধারের সময় শিশুটির হাত ও পা ভাঙা ছিল বলে এলাকার বাসিন্দা সূত্রের খবর। প্রতীকী ছবি।
প্রেমের সম্পর্কে বাধা হয়ে উঠছিল একরত্তি শিশু। তাই তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিলেন শিশুটির মা এবং তাঁর প্রেমিক। মঙ্গলবার এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতুলি ব্লকের কুন্দখালি গ্রামে। মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায় ৪ বছর বয়সি এক শিশুর দেহ উদ্ধার হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। শিশুটির দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা শিশুটির মা মাফুজা পিয়াদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল সত্য বেরিয়ে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে যে, তোয়েব আলি পিয়াদারের সঙ্গে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় মাফুজার। তাঁদেরই ৪ বছরের সন্তান মহারুপ। অভাবের সংসারে কাজের জন্য কলকাতায় থাকেন তোয়েব। শিশুসন্তানকে নিয়ে গ্রামেই থাকতেন মাফুজা। ক্রমেই প্রতিবেশী যুবক আবুল হাসানের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয় তাঁর। সেই বন্ধুত্ব গড়িয়ে যায় প্রেমে। তোয়েব না থাকলে মাঝেমধ্যেই মাফুজার বাড়িতে আসতেন আবুল। তাঁদের সম্পর্কের কথা গ্রামে জানাজানিও হয়ে যায়। ওই অবস্থায় গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে একত্রে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন আবুল এবং মাফুজা। কিন্তু মাফুজার ৪ বছর বয়সি শিশুকেই বাধা হিসাবে দেখতে শুরু করেন আবুল এবং মাফুজা। শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রতিবেশী আবু সিদ্দিকি পিয়াদা জানান যে, সন্ধ্যার দিকে নিজের দোকানে যাওয়ার সময় শিশুটিকে তার বাড়ির সামনে সুস্থ অবস্থায় বসে থাকতে দেখেছিলেন সিদ্দিকি। হঠাৎ শিশুটির মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। সিদ্দিকির দাবি, শিশুটির দেহ দেখে মনে হয়েছিল তার হাত-পা কেউ মুচড়ে ভেঙে দিয়েছেন। মাফুজাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রথমে অস্বীকার করলেও শেষে মুখ খোলেন তিনি।
মাফুজার দাবি, আবুলের সঙ্গে বহু দিন ধরে সম্পর্কে রয়েছেন তিনি। দু’জনে গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আবুল জানান, মাফুজা যদি তাঁর সন্তানকে নিয়ে যেতে চান তা হলে তিনি যাবেন না। ওই শিশুকে না নিয়ে গেলে তবেই মাফুজাকে বিয়ে করবেন বলে জানিয়েছিলেন আবুল। তখনই আবুল এবং মাফুজা দু’জন মিলে একরত্তিকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি করেন মাফুজা। মা হয়ে চোখের সামনে নিজের সন্তানের মৃত্যু দেখতে পারবেন না বলে মাফুজাকে দোকানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আবুল। এমনটাই দাবি করেন মাফুজা। দোকান থেকে ফিরে এসে দেখেন যে, আবুল তাঁর সন্তানকে মেরে ফেলেছেন। পুরো ঘটনা শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন এলাকার বাসিন্দারা।
আরও এক প্রতিবেশী মোশারফ আলি মোল্লা জানান যে, দেহ উদ্ধারের সময় শিশুটির হাত ও পা ভাঙা ছিল। পেটে কাটা দাগও লক্ষ করেন তিনি। সকাল থেকে নাকি মাফুজার বাড়িতে ছিলেন আবুল। কিন্তু পরে বাইকে তেল ভরার নাম করে আবুল পালিয়ে যান বলে দাবি মোশারফের।
এই বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস জানান, শিশুটির মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে কুলতুলি থানার পুলিশ। এখনও পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশ অস্বাভাবিক মৄত্যুর মামলা রুজু করেছে। মাফুজার প্রেমিক আবুল এখনও পলাতক। তাঁর সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শিশুটির দেহ বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দুপুর নাগাদ গ্রেফতার হয়েছেন মাফুজা। স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে কুলতুলি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত শিশুর বাবা তায়েব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy