প্রচেষ্টা: রাস্তার পাশে ‘সিড বল’ ও বীজ পুঁতে দিচ্ছেন সাইকেল আরোহীরা। রবিবার, বকখালিতে। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা দিয়ে সার বেঁধে চলেছেন সাইকেল আরোহীরা। কারও সাইকেলের হ্যান্ডেল থেকে ঝুলছে গাছের চারা, কারও পকেটে বিভিন্ন গাছের বীজ এবং ‘সিড বল’। চলতে চলতেই কোথাও থেমে রাস্তার পাশে বীজ পুঁতে দিচ্ছেন তাঁরা। কখনও আবার স্থানীয় স্কুলপড়ুয়াদের হাতে হাতে বিলিয়ে দিলেন ‘সিড বল’। সবুজায়নের লক্ষ্যে এ ভাবেই সাইকেলে বকখালি অভিযান করলেন সোনারপুরের একটি অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সদস্যেরা।
গত কয়েক বছরে যশোর রোড, বারাসত-টাকি রোডে উন্নয়নের বলি হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার গাছ। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে সেখানে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন চললেও পরিবর্তে একটিও গাছ লাগানো প্রয়োজন মনে করেনি সরকার। কিন্তু এ ভাবে সবুজ হারিয়ে গেলে যে আমাদেরই অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য, সে কথা মনে রেখে শনিবার বীজ হাতে নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন জনা তিরিশেক সাইকেল আরোহী। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার, সাইকেলে ট্রান্স হিমালয় পাড়ি দেওয়া চন্দন বিশ্বাস, সাইকেলে কিলিমাঞ্জারো শৃঙ্গজয়ী উজ্জ্বল পাল প্রমুখ।
অভিযান আর সবুজায়নকে এ ভাবে মেলানোর ভাবনা কেন? রুদ্রপ্রসাদ বলছেন, ‘‘আমরা পাহাড়ে গেলেও সেখানকার প্রকৃতির কথা ভেবে নিজেদের ছড়ানো বর্জ্য নামিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু এখন তো প্রকৃতিকে বাঁচাতে সকলকেই যুক্ত করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’’ তাই গত কয়েক দিন ধরে ক্লাবের সদস্যেরা জোগাড় করেছেন বিভিন্ন গাছের বীজ, চারা। পাখির হাত থেকে বাঁচাতে এবং বৃষ্টির জলে ভিজে গিয়ে সহজে অঙ্কুরোদ্গমের লক্ষ্যে মাটি-গোবরের সঙ্গে কয়েকটি বীজ দিয়ে তৈরি করেছেন কয়েক হাজার ছোট ছোট ‘সিড বল’। আবার অভিযানের খবর শুনে বছরভর জমানো আম-জাম-কাঁঠালের বীজ ক্লাবে এসে দিয়ে গিয়েছেন গৃহবধূ— এমনও ঘটেছে।
এই সবুজ-অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন গাছ লাগানোর বার্তা নিয়ে সাইকেলে পৃথিবী চষে বেড়ানো, বীরভূমের উজ্জ্বল। জানাচ্ছেন, উত্তর ২৪ পরগনা এবং বীরভূমের বন দফতরের অফিস থেকে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, বাঁদরলাঠি, তেঁতুল-সহ বেশ কিছু গাছের বীজ তাঁদের দেওয়া হয়েছে, যা ওই এলাকার পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অরণ্য সপ্তাহ উপলক্ষে মিলেছে বেশ কিছু গাছের শতাধিক চারাও, যা অভিযানের পথে এবং বকখালির গ্রামাঞ্চলে পুঁতেছেন তাঁরা।
শুধু চারা রোপণই নয়, পথে স্থানীয়দের কাছে গাছ নিয়ে প্রচারও চলছে পুরোদমে। উজ্জ্বল বলছেন, ‘‘শুধু বীজ ছড়ানো বা চারা লাগানোই যথেষ্ট নয়, তার দেখভাল করাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই চারা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে তার দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছি আশপাশের কোনও মানুষকে। যাতে ওই গাছটির সঙ্গে তাঁর একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এ ভাবেই গাছ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।’’ শনিবার স্থানীয় রাজনগর হাইস্কুলে পরিবেশ নিয়ে স্লাইড-শো করেন রুদ্র-চন্দনেরা। বকখালি পৌঁছে পঞ্চায়েত ভবনে স্থানীয়দের সামনে করেছেন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। রবিবার, অরণ্য সপ্তাহের প্রথম দিনে বকখালি সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৬০০ কেজি প্লাস্টিকও পরিষ্কার করেন তাঁরা। আজ, সোমবার ফেরার কথা তাঁদের।
সম্প্রতি কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হওয়া পর্বতারোহী বিপ্লব বৈদ্যের নামে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে— ‘আমাদের বিপ্লব, অনেকটা সবুজ, খানিকটা সাইকেল’। কেন? রুদ্রপ্রসাদ বলছেন, ‘‘কাঞ্চনজঙ্ঘা বেসক্যাম্পে বসে বিপ্লবদা বলেছিলেন, এ বার থেকে এরকম সামাজিক কাজই করতে চান তিনি। চান সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে। সে কথা মাথায় রেখেই বিপ্লবদার নামে এই অভিযান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy