Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
এখনও গেল না আঁধার

বুলবুলের ক্ষতে প্রলেপ পড়েনি সুন্দরবনের বহু গ্রামে

হিঙ্গলগঞ্জের সুন্দরবন-লাগোয়া একাধিক গ্রামে ক্ষতচিহ্ন রেখে গিয়েছে বুলবুল। গাছ উপড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, ঘরবাড়ি তছনছ করে গিয়েছে সে।

নিরুপায়: আলো ফেরেনি। এ ভাবেই চলছে পড়াশোনা। হিঙ্গলগঞ্জের আটঘড়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র

নিরুপায়: আলো ফেরেনি। এ ভাবেই চলছে পড়াশোনা। হিঙ্গলগঞ্জের আটঘড়া গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু ও সামসুল হুদা
বসিরহাট ও ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

বুলবুলের দাপটে এক দিকে যেমন চাষের ক্ষতি সামলে উঠতে পারেনি সুন্দরবন, তেমনই বিদ্যুৎ বিপর্যয় এখনও ভোগাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে। ঝড়ে বহু বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছিল। বিকল হয়েছিল বহু ট্রান্সরফর্মার। সে সব যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সারাইয়ের কাজ শুরু হলেও এখনও পুরো কাজ শেষ হয়নি। ফলে ৯ নভেম্বর বুলবুলের পর বিশ দিন কাটতে চললেও অন্ধকারে ডুবে হিঙ্গলগঞ্জ, গোসাবা, কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, নামখানার বহু গ্রাম। সোমবার আলিপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের সামনে এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন।

হিঙ্গলগঞ্জের সুন্দরবন-লাগোয়া একাধিক গ্রামে ক্ষতচিহ্ন রেখে গিয়েছে বুলবুল। গাছ উপড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, ঘরবাড়ি তছনছ করে গিয়েছে সে। ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা মেরামত করা গেলেও কিছু গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো যায়নি। ফলে ক্ষতি হচ্ছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায়। বেশ কিছু জরুরি পরিষেবাও বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে মোটর না চালাতে পারায় পানীয় জল পৌঁছচ্ছে না। ব্লক প্রশাসন প্লাস্টিকের প্যাকেটে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে।

যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের পাটঘরায় থাকেন মতিন্দ্রনাথ মণ্ডল, রতন মণ্ডল, চন্দ্রকান্ত মৃধারা। তাঁরা জানালেন, গ্রামের অনেকেই কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরু, তামিলনাড়ুতে থাকে। বুলবুলের পরে এত দিন পেরিয়েও বিদ্যুৎ না ফেরায় মোবাইলে চার্জ দিতে পারছেন না মানুষ জন। ফলে ভিনরাজ্যে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। উত্তর গোবিন্দকাটি গ্রামের কমল আঢ্য, রত্না পরামানিক বলেন, ‘‘আগে তবুও বাড়ি বাড়িতে সোলার লাইট ছিল। বিদ্যুৎ আসার পরে সে সব অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ শ্রীধরকাটি, সামসেরনগর, পারঘুমটি গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। রাত নামলে বাড়ির বাইরে পা রাখতে সাহস হচ্ছে না।’’ আপাতত হ্যারিকেন, কুপি, টেমি, মোমবাতির উপরেই ভরসা রাখতে হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সুন্দরবনের নানা প্রান্তে ইতিমধ্যেই পড়ুয়াদের হাতে লন্ঠন, কেরোসিন পৌঁছে দিয়েছে প্রশাসন। বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরাও। জেনারেটর জ্বেলে মোবাইল চার্জ করে দেওয়ার জন্য ১০-২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে নানা জায়গায়। লাহিড়িপুর গ্রামের সুতপা মণ্ডল বলে, ‘‘সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। বিদ্যুৎ না ফেরায় পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইল বন্ধ থাকায় বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না।’’

মাঝে মধ্যে গোসাবা বাজার থেকে পয়সা খরচ করে মোবাইল ফোনের চার্জ দিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে বলে জানায় ওই কিশোরী। গোসাবার গ্রিল কারখানার মালিক বলেন, ‘‘বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসার বেশ ক্ষতি হচ্ছে। সময় মতো মাল ডেলিভারি করতে পারছি না।’’

গোসাবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অচিন পাইক বলেন, ‘‘বুলবুলের ফলে ব্লক এলাকার প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা চেষ্টা করছেন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য।’’

জেলাশাসক বলেন, ‘‘হাইটেনশন লাইনের সমস্যা সমাধান করা গেলেও এসটি লাইনের কিছু সমস্যা রয়েছে। এ জন্য আমি বিদ্যুৎ দফতরের বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আরও বেশি সংখ্যক লোক নিয়োগ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁদের বলা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Basirhat Bhangar Cyclone Bulbul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy