প্রতীকী ছবি
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বছরখানেক আগে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল বছর ষোলোর কিশোরীর। তার পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সেই নাবালিকা বধূ। ব্যারাকপুর মহকুমার একটি গ্রামীণ ব্লকের এই ঘটনার খবর জেলা চাইল্ড লাইন মারফত গত মাসে কানে আসে প্রশাসনের। দরিদ্র পরিবারের ওই কিশোরীকে সরকারি হোমে নিয়ে যাওয়ার কথা উঠলেও একা যেতে নারাজ সে। ফলে ওই বধূকে নিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলছে প্রশাসন। কিন্তু পুলিশের দাবি, তাদের হাত-পা বাঁধা। এখন তার ভবিষ্যৎ কী, সেই প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা বধূর খবর জেলা চাইল্ড লাইন মারফত গত ২৬ জুলাই প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়। একাদশ শ্রেণির ওই কিশোরীর বাড়ি যান প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। গত মাসের শেষ দিকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে লিখিত রিপোর্ট দেয় সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন। জেলা সমাজকল্যাণ দফতর, আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ, বিএমওএইচ এবং সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-কেও তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়।
কী আছে রিপোর্টে? প্রশাসন সূত্রের খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে, অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর অবস্থা সঙ্কটজনক, দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। বালিকা খুবই দরিদ্র। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত তার সামাজিক অবস্থানের প্রশ্নও। পরিস্থিতির ভার বহন করা কঠিন হবে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর পক্ষে।
ব্লক প্রশাসনের চিঠি পেয়েই সক্রিয় হয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। সূত্রের খবর, তাদের তরফে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত ওই কিশোরীকে যেন সরকারি হোমে আনার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পুলিশ কিশোরীর বাড়ি গেলে তাঁরা জানান, হোমে যেতে নারাজ সে।
জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া শূররায় জানান, তাঁরা ওই কিশোরীর পরিবারকে জানিয়েছিলেন, তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে হোমে পাঠানো হোক। কিশোরী প্রথমে রাজি না হলেও পরে জানায়, মা সঙ্গে থাকলে হোমে যেতে সে প্রস্তুত। কিন্তু সরকারি হোমে তার মাকে সঙ্গে রাখা সম্ভব নয়। মহুয়ার কথায়, ‘‘কিশোরী অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এর জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করা উচিত পুলিশের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখা উচিত। অভিযোগ দায়ের হলে কিশোরীকে পুলিশি হস্তক্ষেপে হোমে আনা হবে।’’
কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানার ওসির বক্তব্য, ‘‘মামলা করব কিসের ভিত্তিতে? কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কিশোরীকে হোমে নিয়ে যেতে পারিনি। ওর পরিবার অভিযোগ দায়ের করতেও রাজি নয়।’’ নাবালিকা বিবাহ প্রতিরোধ আইনে কিশোরী ও তার স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলে ওই কিশোরীর উপরেই চাপ বাড়তে পারে। তার বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে ওই পদক্ষেপ করা ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ। মহুয়া বলেন, ‘‘বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতরের অজানা নয়। তারাও নিশ্চয়ই পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন।’’
প্রসবের পরে শিশুটির কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির বক্তব্য, তাকে সরকারি নিয়ম মেনে দত্তক দেওয়া যেতে পারে। তাকে অসৎ উদ্দেশ্যে, কিছুর বিনিময়ে যাতে কারও কাছে দেওয়া না হয়, তা দেখবে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy