দাদুর কোলে মা-হারা মেয়ে।
মায়ের মৃত্যুর খবর এখনও দেওয়া হয়নি তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটাকে। দাদুর কোলে বসে সে নিজেই বলে চলেছিল, ‘‘বাবা আর ঠাকুমা মিলেই তো মায়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল। মা খুব চিৎকার করছিল।’’
বাকি ঘটনাটা জানা নেই ছোট্ট পৌলমীর। সে এখনও বোঝেনি, বুধবার রাতে মারা গিয়েছেন তার মা মিতালি পাল (২৪)। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মিতালির স্বামী পরিতোষ পাল, শাশুড়ি সবিতা পাল, মামাশ্বশুর সুকুমার দত্ত, মামিশাশুড়ি রূপা দত্তকে। দেহ ময়না-তদন্ত করানো হয়েছে।
মিতালির বাবা বিধান নাগ থাকেন বনগাঁর বক্সিপল্লিতে। কারখানার সামান্য কর্মী। বললেন, ‘‘জামাই গাড়ি কিনবে বলে টাকা চাইছিল। কিন্তু আমাদের তা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। সে জন্যই মেরে ফেলল মেয়েটাকে।’’
জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে বক্সিপল্লির মিতালির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল হাবরার জানাপুলের বাসিন্দা পরিতোষ পালের। পরিতোষ গাড়ি চালায়। মিতালির বাপের বাড়ির লোকজন জানালেন, বিয়ের সময়ে দেনাপাওনার কোনও কথা হয়নি। কিন্তু বিয়ের পরে কিছু দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় নানা বায়নাক্কা। কখনও টাকা, কখনও সোনার চেনের জন্য দাবি জানাতে থাকে জামাই ও তার বাড়ির লোকজন। কিছু কিছু দাবি মিটিয়েওছিলেন বিধানবাবু। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বাড়ছিল।
মৌসুমি।
বাধ্য হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে হাবরা থানায় দু’বার নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিতালি। প্রথমবার ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে। সে বার গ্রেফতারও হয়েছিল পরিতোষ। পরে জামিনে ছাড়া পায়।
কিছু দিন সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ফের শুরু হয় মারধর। মাস তিনেক আগে থানায় স্বামীর নামে আবার নালিশ জানান মিতালি। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দ্বিতীয় বার অভিযোগের পরে গা-ঢাকা দেয় পরিতোষ। তাকে ধরতে উঠে পড়ে লাগে পুলিশ। হাবরা থানার এক মহিলা অফিসার বার কয়েক যান মিতালির শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু পুলিশের দাবি, দিন কয়েকের মধ্যে মিতালি কাকুতি-মিনতি শুরু করেন, তাঁর স্বামীকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। স্বামী এখন বদলে গিয়েছেন।
কিন্তু সেই ‘বদলে যাওয়া’ যে শুধুই কথার কথা, প্রমাণ হয়ে গেল মঙ্গলবার। ওই সন্ধ্যায় পরিতোষ মিতালির বাপের বাড়িতে ফোন করে বলে, স্ত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। ভর্তি করা হয়েছে বারাসত হাসপাতালে। পরে পরিতোষরা জানিয়েছিল, গায়ে আগুন দিয়েছেন মিতালি নিজেই। যদিও বাপের বাড়ির আত্মীয়দের দাবি, পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে। মা-হারা মেয়ে পৌলমীর বয়ানও মিলে যাচ্ছে সেই দাবির সঙ্গে।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy