Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
Crime

স্বামীকে মাটিতে পুঁতে রেখে উপরে খাট বিছিয়ে ঘুম স্ত্রীর

লিশ জানতে পেরেছে, এখানেও খুন করে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল দেহ। আড়াই ফুট বাই দু’ফুটের ছোট্ট গর্তটায় ঢুকছিল না রক্তাক্ত দেহটা।

মাটি খুঁড়ে তোলা হচ্ছে দেহ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মাটি খুঁড়ে তোলা হচ্ছে দেহ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৯
Share: Save:

মনুয়া-কাণ্ডের ছায়া এ বার গাইঘাটায়। প্রেমিকের সঙ্গে যড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুনের অভিযোগে ধরা পড়ল স্ত্রী। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রেমিককেও। বছর কয়েক আগে বারাসতে যুবক খুনে এ ভাবেই ধরা পড়েছিল প্রেমিকা মনুয়া ও তার প্রেমিক।

কী হয়েছে গাইঘাটায়?

পুলিশ জানতে পেরেছে, এখানেও খুন করে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল দেহ। আড়াই ফুট বাই দু’ফুটের ছোট্ট গর্তটায় ঢুকছিল না রক্তাক্ত দেহটা। ধারাল কিছু দিয়ে ঘা মেরে হাড়-পাঁজরা, হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। কোনও রকমে ঠেসেঠুসে গর্তে ভরে উপরে মাটি চাপা দিয়ে দেয় আততায়ী। তার উপরে বিছিয়ে দেওয়া হয় খাট-বিছানা, কিছু মালপত্র। সেই খাটেই গোটা রাত শুয়ে ছিল নিহত যুবকের স্ত্রী। সঙ্গে প্রেমিক।

গাইঘাটার গোয়ালবাথান এলাকার ঘটনা। পুলিশ গ্রেফতার করেছে নিহত রামকৃষ্ণ সরকারের (৪০) স্ত্রী স্বপ্না ও তার প্রেমিক সুজিত দাসকে। বুধবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গর্ত খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। তদন্তকারীদের দাবি, স্বপ্না এবং সুজিত খুনের ছক কষেছিল। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে ঘা মেরে খুন করা হয়েছে রামকৃষ্ণকে। সোমবার রাতে ওই ঘটনার পরে দেহ ঘরে টেনে এনে পুঁতে ফেলা হয়। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই খুনের ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামকৃষ্ণর আদি বাড়ি কোচবিহারে। বনগাঁর কুড়িরমাঠ এলাকায় পাঁচ ও ন’বছরের দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তিনি। শৌচালয়ের চেম্বার সাফাইয়ের কাজ করতেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, মাস কয়েক আগে মোবাইলে মিসড কলের মাধ্যমে স্বপ্নার সঙ্গে পরিচয় হয় সুজিতের। দ্রুত ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সুজিতের বাড়ি গাইঘাটারই গোয়ালবাথান এলাকায়। রামকৃষ্ণদের বাড়িতে যাতায়াতও শুরু করে সুজিত। স্বপ্নাকে ধর্মবোন পাতায়। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, রামকৃষ্ণর যাতে সন্তেহ না হয়, সে জন্যই বোন পাতিযেছিল ওই যুবক। কিন্তু তাতেও অবশ্য ঘটনা জানাজানি আটকায়নি। এই নিয়ে অশান্তি চলছিল সংসারে। তদন্তকারীদের দাবি, কিছু দিন আগে রামকৃষ্ণকে খুনের ছক কষে স্বপ্না-সুজিত। সোমবার ঠাকুর দেখার নাম করে স্বপ্না স্বামীকে নিয়ে সুজিতের বাড়িতে যায়। সঙ্গে ছিল ছোট ছেলে। সুজিত মদ খাওয়ানোর নাম করে রামকৃষ্ণকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরোয়। ঝোপের ধারে বসে দু’জনে মদ্যপান করে। অভিযোগ, নেশাগ্রস্ত রামকৃষ্ণকে মোটা কাঠের লাঠি দিয়ে মাথায় ঘা মারে সুজিত। পরে বাঁশবাগানের কাছে পুকুরের পাশে দেহ টেনে নিয়ে যায়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রাত তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। স্বপ্নাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে সুজিত। দেহ লোপাটের জন্য টেনে আনা হয় ঘরে। খাট সরিয়ে গর্ত খুঁড়ে রামকৃষ্ণর দেহ পুঁতে দেওয়া হয়।

সুজিত পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। তার আগে দু’বার বিয়ে হয়েছিল। দুই স্ত্রীই ছেড়ে চলে গিয়েছে। বাড়িতে মা ও বোনকে নিয়ে থাকে। ঘটনার সময়ে তাঁরা কোথায় ছিলেন, কিছু জানতেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কী ভাবে খুনের কিনারা করল পুলিশ? রামকৃষ্ণকে যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে মঙ্গলবার কোনও রকম উচ্চবাচ্য করেনি স্বপ্না। এ দিকে, মঙ্গলবার সকালে পুকুর পাড়ে রক্তের দাগ দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ খোঁজাখুঁজি করেও সন্দেহজনক কিছু দেখেনি। বাসিন্দাদের দাবি মেনে পুকুরে জালও ফেলা হয়। ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চলে। তাতেও কিছু মেলেনি। বুধবার সকালে সুজিতের ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে ফের পুলিশকে ডাকা হয়। গাইঘাটা থানার ওসি বলাই ঘোষ গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সুজিতের একটি ঘরের খাটের নীচে আলগা মাটি দেখে সন্দেহ হয়। তখনও অবশ্য রামকৃষ্ণর মৃত্যুর কথা জানেন না কেউ। বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার, সিআই গাইঘাটা পৌঁছন। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উপস্থিত হন গাইঘাটার বিডিও বিব্রত বিশ্বাস। মাটি খুঁড়তেই দেহ মেলে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy