বাঁকুড়ার কোতুলপুরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডাম্পার। বুধবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাওয়ায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল গরু বোঝাই ট্রাক। চলছিল মেরামতের কাজ। মাঝ রাতে সে রাস্তা ধরে আসা বালির ডাম্পার ওই ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দেওয়ায়, মৃত্যু হল চার জনের। আহত হয়েছেন তিন জন। মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার কোতুলপুরে, বিষ্ণুপুর-আরামবাগ ২ নম্বর রাজ্য সড়কে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত কাদিরুল গাজি (৩৫) ও তাঁর ভাই হাফিজুল গাজি (২৪), জাকিরুল ওরফে সুকুর গাজি (৩০) ও জাফর মোল্লা (৩৫) দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের বাসিন্দা। তাঁরা গরু বোঝাই ট্রাকটিতে ছিলেন। ওই ট্রাকে থাকা আরও দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। বালির ডাম্পারের খালাসি, জয়পুরের হেতিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটল মিদ্যাকেও কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। ডাম্পারের চালক পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙড়ের শাঁকশহর গ্রামের বাসিন্দা কাদিরুল গরু ব্যবসায়ী। তিনি ভাই হাফিজুল এবং আরও জনা পাঁচেককে নিয়ে পুরুলিয়ার বলরামপুরে গরু কিনতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গোটা পঞ্চাশ গরু কিনে ফেরার পথে, ট্রাকের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাওয়ায় কোতুলপুরের রায়বাঘিনি এলাকায় রাস্তার পাশে রেখে মেরামত করা হচ্ছিল। তখনই পুরুলিয়ার মানবাজার থেকে কলকাতাগামী একটি বালির ডাম্পার সজোরে সেটির পিছনে ধাক্কা দেয়। ট্রাকটি পাশের মাঠে গিয়ে পড়ে। ডাম্পারটি পাশের একটি হোটেলেও ধাক্কা মারে।
দুর্ঘটনার শব্দে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন ভান্ডারি বলেন, ‘‘মেরামতির জন্য ট্রাকের নীচে থাকা তিন জন গুরুতর ভাবে জখম হন। এলাকার লোকজন উদ্ধারকাজে হাত লাগান। দড়ি খুলে ট্রাক থেকে গরুগুলিকে বার করার চেষ্টা হয়।” এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে আসেন মৃতদের এক আত্মীয় হায়দার আলি মোল্লা। তাঁর দাবি, ‘‘বালি বোঝাই ডাম্পারটি ঠিকঠাক চালালে, হয়তো এমন ঘটত না।’’
পুলিশ জানায়, আহতদের কোতুলপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কাদিরুল, সুকুর ও জাফরকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বাকিদের কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় আনার পরে, হাফিজুলকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি আবার অসুস্থ বোধ করায়, ভাঙড়ের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাক ও ডাম্পারটি আটক করা হয়েছে। তেরোটি গরু মারা গিয়েছে। বাকি গরুগুলিকে স্থানীয় হিমঘর চত্বরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় এক পরিবারের দুই ভাই-সহ এলাকার তিন জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভাঙড়ের শাঁকশহর গ্রামে। কাদিরুলের বাড়ির পাশেই সুকুর গাজির বাড়ি। দিন কয়েক আগে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বুধবার এলাকার মানুষজন গ্রামের রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেন। কাদিরুলের শ্যালক রহমাতুল্লা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি ছোট। সংসারটির কী হবে, বুঝতে পারছি না! সরকার আর্থিক সহযোগিতা করলে উপকার হবে।’’ ভাঙড়ের পাত্রপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জাফরের মা শাবানা বিবি বলেন, ‘‘পরিবারের একমাত্র রোজগেরে আমার ছেলে। নাতি-নাতনিদের কে দেখবে, পুরো পরিবারের কী হবে, বুঝতে পারছি না!’’ সংশ্লিষ্ট দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। পঞ্চায়েতের তরফে মৃতের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অন্ধকারে ঠিকমতোদেখতে না পেয়ে ডাম্পারটি ট্রাকে ধাক্কা দেয়। সেটির চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। চালকের খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy