চাপলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল ক্লাসরুম। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবন্ধকতা কোনও ইচ্ছেশক্তির বাধা হতে পারে না, তা প্রমাণ করলেন এক স্কুল শিক্ষক। নিজের চেষ্টায় তাঁর কর্মস্থল মথুরাপুর ২ ব্লকের চাপলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজ়িটাল শ্রেণিকক্ষ গড়ে তুলতে সাহায্য করলেন একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী অর্ণবকুমার হালদার।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বত্রিশের ওই শিক্ষক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। শিক্ষককতা শুরুর দিনগুলিতে বেশ লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আগের স্কুলে তাঁকে প্রায় ঢুকতেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে তিনি সেখানে পড়ানোর সুযোগ পান। ২০২২ সালে অর্ণবের বদলি হয় চাপলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানেই প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ডিজ়িটাল শ্রেণিকক্ষ গড়ে তুলেছেন তিনি। গত মঙ্গলবার তারই উদ্বোধন করেন মথুরাপুর ২ ব্লকের দক্ষিণ অবর প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল পরিদর্শক স্নেহজিৎ দে।
চাপলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ২২৩ জন। শৈশবে ওই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন তিনি। তাঁকে স্কুলে যাওয়া আসা করতে হয় হুইলচেয়ারের সহায়তায়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আনন্দদায়ক শিক্ষণ প্রক্রিয়ার জন্য এই নতুন পদ্ধতির শ্রেণিকক্ষ তৈরির কথা ভেবেছিলেন তিনি।
অর্ণবের কথায়, “এই শ্রেণিকক্ষ তৈরির পিছনে মূল কারণ, আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। আমি ব্ল্যাক বোর্ড ব্যবহার করতে পারি না। হুইলচেয়ারে বসেই ক্লাস নিতে হয়। কচিকাঁচাদের পড়াশোনা খামতি থেকে যাচ্ছিল। সেটা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। এই স্কুল শৈশবে আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। এ বার নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নব প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য এই শ্রেণিকক্ষ গড়েছি। এখান থেকে তারা নতুন কিছু শিখতেও পারবে, আবার তাদের মনোরঞ্জনও হবে।”
প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও অনেক বাড়িতে টিভি নেই। সেই সব বাড়ির ছেলেমেয়েরা ডিজ়িটাল শ্রেণিকক্ষ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। স্কুলের পড়ুয়া তনয়া মণ্ডল, সুকন্যা মণ্ডলরা জানায়, বিশাল পর্দার সামনে বসে ক্লাস করছি। সেই পর্দায় গল্পের ছবি ভেসে উঠছে, কী আনন্দ যে হচ্ছে! আর কোনও দিন স্কুল কামাই করব না। খুশি অভিভাবকেরাও। তাঁরা জানান, গ্রামের সব বাড়িতে এখন বিদ্যুৎ সংযোগ হলেও, সব বাড়িতে এখনও টিভি নেই। এমন প্রত্যন্ত এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে বড় পর্দায় ছবি দেখিয়ে পড়ানো হচ্ছে এতে সকলে খুব খুশি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষালাভ করলে স্কুলে আসার আগ্রহ বাড়বে, কমবে স্কুলছুটের সংখ্যা।
স্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাজকন্যা বাউর মণ্ডল বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান খুব ভাল উদ্যোগ। আমরা অর্ণবের জন্য গর্বিত।” বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভীক মণ্ডল জানান, স্কুলে নতুন প্রযুক্তির আগমনে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সকলেই উৎসাহিত। স্কুলের প্রতি সকলের আগ্রহ বাড়বে বলে তাঁর বিশ্বাস।
মথুরাপুর ২ ব্লকের দক্ষিণ অবর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক স্নেহজিৎ দে বলেন, “কার কী সমস্যা আছে সেটা বড় কথা নয়। ইচ্ছাশক্তি থাকাই বড় কথা। ওই শিক্ষক যে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, তা শুধুমাত্র ইচ্ছেশক্তির জোরেই। এতে পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দেবে ছাত্রছাত্রীরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy