দেবযানী দাস। —নিজস্ব চিত্র।
জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক বালিকার। ঘটনাটি ঘটেছে হাবড়া পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জয়গাছি-পালপাড়া এলাকায়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বারোর মৃত বালিকার নাম দেবযানী দাস। হাবড়া গালর্স হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত সে। জ্বর-ডেঙ্গিতে ভুগে এই মরসুমে হাবড়া শহরে এই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা এটি।
দেবযানীর মৃত্যুর পরে পরিবারের সদস্যেরা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। এলাকায় মশা মারার কাজে প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগও তুলছেন তাঁরা। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ অগস্ট রাতে দেবযানীর জ্বর আসে। বাড়ির লোকজন তাঁকে প্যারাসিমল খাওয়ান। সকালে জ্বর না কমায় স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ১৩ অগস্ট রিপোর্টে ডেঙ্গি ধরা পড়ে। দেবযানীকে ওই দিনই হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল মেয়েটি। কিন্তু ১৮ অগস্ট ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে। বমি শুরু হয়। হাবড়া হাসপাতাল থেকে তাকে ‘রেফার’ করা হয়। পরিবারের লোকজন দেবযানীকে নিয়ে যান বারাসত জেলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসায় অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের লোকজন। কয়েক ঘণ্টা থাকার পরে দেবযানীকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানেই ২০ অগস্ট সন্ধ্যায় দেবযানীর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, দেবযানীর অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হলে তাকে কেন আগেভাগে হাবড়া হাসপাতাল থেকে রেফার করা হল না। এ বিষয়ে অবশ্য হাবড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে চাননি। গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, "ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। মহিলা, পুরুষ ও বাচ্চাদের আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। আইসিসিইউ-তে শয্যা রাখা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, রোগীর বাড়ির লোকজন যেন হাফ-ডাক্তার। তাঁরাই সব বুঝে যান। এখান থেকে আমার অনুমতি ছাড়া কোনও ডেঙ্গি রোগীকে স্থানান্তরিত করা হয় না। রোগীর আত্মীয়েরা অনেক সময়ে বন্ডে সই করে নিয়ে যান।"
বাসিন্দারা জানালেন, দেবযানীর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এলাকায় মশা মারার কাজ করা হয়নি। ঝোপ-জঙ্গল সাফাই হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার কাজ করেননি। যদিও তার মৃত্যুর পরে পুরসভার পক্ষ থেকে ঝোপ-জঙ্গল কাটা হচ্ছে। জমা জল সাফ করা হচ্ছে। মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। চুন-ব্লিচিংও ছড়ানো হচ্ছে।
দেবযানীর বাবা বিশ্বজিৎ বলেন, "মশা মারার ব্যাপারে পুরসভা এই উদ্যোগ যদি আগে নিত, তা হলে মেয়েকে হারাতে হত না। প্রশাসনের কাছে আবেদন, আর যেন কোনও বাবাকে সন্তান হারাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করুন।" বুধবার পুরপ্রধান নারায়ণচন্দ্র সাহা দেবযানীর বাড়িতে যান। তিনি বলেন, "ওই এলাকা-সহ সর্বত্র মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে নিয়মিত। চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল সাফ করা হচ্ছে। বাড়ির মধ্যে ঝোপ-জঙ্গল সাফ করতে অনেক সময়ে পুরকর্মীদের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তা সত্বেও আমরা বাড়ির মধ্যে ঝোপ-জঙ্গল সাফ করে দেব।’’ তিনি জানান, দেবযানীর মৃত্যুর পরে এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষা করা হয়। দু'জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিরোধীদের অবস্য অভিযোগ, ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরপ্রধান ও কাউন্সিলররা উদাসীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy