—প্রতীকী চিত্র।
প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধানসভা এলাকায় চাষিরা সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি না করলেও তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার টাকা জমা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনাটি চলতি বছরে পঞ্চায়েত ভোটের আগে। এ বিষয়ে হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতির তৃণমূলের জাকির হোসেন ১২ মে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘অভিযোগ হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই তদন্ত হয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না।’’
অভিযোগে জাকির জানিয়েছিলেন, সহায়ক মূল্যে চাষিরা ধান বিক্রি না করলেও তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬০-৯০ হাজার টাকা করে জমা পড়েছিল। হাবড়া ১ ব্লকের পৃথিবা পঞ্চায়েতের মারাকপুর, রাঘবপুর, বামিহাটি এলাকার প্রায় ৮০-১০০ জন চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা পড়ে বলে জাকিরের দাবি। লিখিত অভিযোগে জাকির আরও লিখেছেন, ওই চাষিরা কেউ ধান বিক্রি করেননি। স্থানীয় এক সার বিক্রেতা (রুহুল আমিন বৈদ্য) চাষিদের কিসান ক্রেডিট কার্ড করে দেবেন বলে তাঁদের কাছ থেকে ভোটার কার্ড, জমির পরচা, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই নিয়ে নিয়েছিলেন। অভিযোগ, নথিপত্র জমা দেওয়ার কিছু দিন পরে চাষিদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে। পরবর্তী সময়ে ওই সার ব্যবসায়ী চাষিদের চাপ দিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেন।
জাকির বলেন, ‘‘আমি তখন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলাম। কয়েক জন চাষি আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। আমি বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। কয়েক জন চাষি খাদ্য দফতরে অভিযোগ করেছিলেন। তবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে তখন জানানো হয়নি। এই দালালচক্রের সঙ্গে একটি সমবায় ব্যাঙ্কের লোকজন এবং মিল মালিকেরা জড়িত বলে জানতে পারি।’’
আতিয়ার রহমান নামে এক চাষির স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬০ হাজার টাকা জমা পড়েছিল। আতিয়ার বলেন, ‘‘ওই সার ব্যবসায়ী কিসান ক্রেডিট কার্ড করে দেবেন বলে নথিপত্র চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, হাজার টাকাও দেবেন। আমার নিজের, স্ত্রীর এবং মায়ের নথিপত্র দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬০ হাজার টাকা জমা পড়ে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলে বাইরে কাজ করে। স্ত্রী ভেবেছিলেন, ছেলে টাকা পাঠিয়েছে। তাই সেখান থেকে কয়েক হাজার টাকা তুলে অন্য অ্যাকাউন্টে জমা করেন।’’ আতিয়ার জানান, পরে ওই সার দোকানি ফোন করে জানান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকার মধ্যে ১ হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দিতে হবে।
এ নিয়ে আতিয়ারের সঙ্গে ঝামেলাও বাধে। চাপ সৃষ্টি করা হয়। আতিয়ারের দাবি, পরে লিখিত ভাবে ওই সার দোকানি টাকা ফেরত পেয়েছেন বলে জানালে আতিয়ার টাকা ফিরিয়ে দেন। তবে প্রথমে পুরো টাকা দিতে পারেননি। কিছু খরচ হয়ে গিয়েছিল। আতিয়ারের কথায়, ‘‘আমি চাই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হোক। এক বার শুধু খাদ্য দফতর থেকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমি ধান বিক্রি করেছিলাম কি না। আর কোনও তদন্ত হয়েছে কি না জানি না।’’
অভিযুক্ত রুহুলকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ তোলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমি কোনও চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকাইনি। মিথ্যা বলা হচ্ছে।’’
সে সময়ে হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন তৃণমূলের অজিত সাহা। তিনি জাকিরের অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।
হাবড়ার সিপিএম নেত্রী স্বপ্না ঘোষ বলেন, ‘‘এটাকে বলে অ্যাকাউন্ট ভাড়া খাটানো। ধান না কিনে খাতায়-কলমে দেখানো হয়েছিল, চাষিরা ধান বিক্রি করেছেন। চাষিদের কিছুটা টাকা দিয়ে সেই টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। টাকার ভাগ উপরেও পৌঁছয়। দীর্ঘ দিন ধরে হাবড়ায় এ জিনিস হয়ে আসছে। শস্যবিমার ক্ষেত্রে, জব কার্ডের ক্ষেত্রেও আমরা একই ঘটনা দেখেছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy