Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Diamond Harbour

অভাবের ঘরে জন্মে উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতী দুই বোন

ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের ষাটমনিসা গ্রামের বাসিন্দা ওমরমিস একজন দর্জি। অন্যের কারখানায় কাজ করেন। লকডাউন-পর্বে এক পয়সাও ঘরে ঢোকেনি।

রাসনা ও তার বোন। নিজস্ব চিত্র

রাসনা ও তার বোন। নিজস্ব চিত্র

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০৬:২৬
Share: Save:

বড় মেয়ে এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। মেজ মেয়ে মাধ্যমিকে পেয়েছে ৮০ শতংশের বেশি নম্বর। দুই মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ তিনি জোগাড় করবেন কোথা থেকে, তা ভেবে পাচ্চেন না ডায়মণ্ড হারবারের বাসিন্দা ওমরমিস মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘আমপানের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারিনি। ওদের পড়ানোর টাকা পাব কোথা থেকে?’’

ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের ষাটমনিসা গ্রামের বাসিন্দা ওমরমিস একজন দর্জি। অন্যের কারখানায় কাজ করেন। লকডাউন-পর্বে এক পয়সাও ঘরে ঢোকেনি। অল্প যা সঞ্চয় ছিল, তাতেই দিন কাটছে। মরার উপরে খাঁড়ার ঘা দিয়েছে আমপান। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। এখন ত্রিপল টাঙিয়ে ঘরটিকে কোনওরকমে থাকার উপযুক্ত করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। এখনও পাইনি। কবে পাব, তা জানি না। কী করে বাঁচব, জানি না। মেয়েগুলোর পড়াশোনা কী করে হবে, জানি না।’’

ওমরমিসের বড় মেয়ে রাসনা খাতুন উচ্চমাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। তবু মন ভাল নেই ডায়মন্ড হারবার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাসনার। তিনি বলেন, ‘‘বাবা ঘরে বসে। ওঁর চোখের দিকে তাকাতে পারি না। কী করে আমার উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাবেন বাবা?’’ মেজ মেয়ে সুহানা মাধ্যমিকে ৮০.২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। তার কথায়, ‘‘বাবা-মা অনেক পরিশ্রম করে আমাদের পড়াচ্ছেন। কিন্তু কতদিন ওঁরা এ ভাবে পরিশ্রম করে যাবেন! অভাবের ঘরে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কত কঠিন, তা আমরা বুঝতে পারছি।’’

দুই বোনকে অভয় দিয়েছেন বিডিও (ডায়মন্ড হারবার ১) মিলনতীর্থ সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই দুই কৃতী ছাত্রীর কথা শুনেছি। ওঁদের পাশে রয়েছি। রাসনার ভর্তি নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না-হয় তা আমি দেখব। দুই বোনই কন্যাশ্রী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ওরা পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। প্রশাসন পাশে রয়েছে।’’

আজ, বুধবার ওমরমিসের বাড়ি যাওয়ার কথা বিডিও-র। মিলনতীর্থবাবু বলেন, ‘‘দুই সফল ছাত্রীকে শুভেচ্ছা জানাব।’’ ওমরমিস এখনও আমপানের ক্ষতিপূরণ পাননি। এ বিষয়ে বিডিও-র প্রতিক্রিয়া, ‘‘আশা করি ক্ষতিপূরণের টাকা তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন। নানা কারণে টাকা আটকে থাকতে পারে। ব্যাঙ্কের সমস্যা হতে পারে। ওই বিষয়টিও আমি খোঁজ করছি।’’

সাহায্যের আশায় ওমরমিস গিয়েছিলেন স্থানীয় শিক্ষক মইদুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘অভাবকে সঙ্গী করে দুই বোন ভাল রেজাল্ট করেছে। ওরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’’ দুই মেয়ের জন্য গৃহ-শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে পারেননি তাঁদের বাবা। সেই কারণে আক্ষেপও রয়েছে ওমরমিসের। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে দুটোর পড়াশোনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তা-ও ওরা ভাল ফল করেছে।’’

ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে রাসনার। ভবিষ্যতে আইএএস বা ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আমলা হতে চান তিনি। বলেন, ‘‘শুনেছি ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। দেখি আমার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ মেলে কিনা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy