Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রার্থী-বাছাই সভায় বেশির ভাগ ওয়ার্ডে একাধিক নাম

আসন্ন বনগাঁ পুরসভার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। তার কারণ, প্রার্থী-বাছাই সভাগুলিতে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে আসছে না। এমনকী, তৃণমূল কাউন্সিলর রয়েছেন, এমন ওয়ার্ডেও ওই কাউন্সিলের পাশাপাশি ওয়ার্ডের দলীয় কর্মীদের একাংশ অন্য নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছেন।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০১:২০
Share: Save:

আসন্ন বনগাঁ পুরসভার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। তার কারণ, প্রার্থী-বাছাই সভাগুলিতে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে আসছে না। এমনকী, তৃণমূল কাউন্সিলর রয়েছেন, এমন ওয়ার্ডেও ওই কাউন্সিলের পাশাপাশি ওয়ার্ডের দলীয় কর্মীদের একাংশ অন্য নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছেন। হাতে গোনা কয়েকটি ওয়ার্ড বাদ দিয়ে সব কটি ওয়ার্ডেই কোথাও সাত জন, কোথাও পাঁচ জন, কোথাও আবার তিন-চার জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে দিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক দলীয় কোন্দলও সামনে এসে পড়ছে। যার প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কিনা, এখন সেটাই দেখার। যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, পুরসভার মতো স্থানীয় ভোটে ডানপন্থী দলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কম বেশি জটিলতা থাকে। কিন্তু একবার প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যায়।

সদ্য সমাপ্ত বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করেছেন। উপনির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী লিড পেয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এখন তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ বেড়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। উপনির্বাচনে ভাল ফল পাল্টে দিয়েছে নেতা-কর্মীদের মনোভাবও। উপনির্বাচনের আগে পর্যন্ত এমনটা ভাবা হচ্ছিল, দলীয় টিকিট না পেয়ে অনেকেই বিজেপির হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন সম্ভাবনা অবশ্য দেখা যাচ্ছে না বলেই জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন।

জেলা তৃণমূ‌লের এ বার নির্দেশ ছিল, ওয়ার্ড-ভিত্তিক বৈঠক করে বেশির ভাগ মানুষের মতামত নিয়ে প্রার্থী বাছাই করতে হবে। সেই মতো বনগাঁতেও দিন কয়েক আগে থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক বৈঠক শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ২২টি ওয়ার্ডেই ওই বৈঠক শেষ হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, একমাত্র ১, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এক জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডটি বর্তমানে সিপিএমের দখলে। ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী বাছাই বৈঠকে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে উঠে এসেছে শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর আঢ্যের নাম। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসাবে উঠে এসেছে পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্যের নাম। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসাবে কর্মীদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর অভিজিৎ কাপুড়িয়ার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাকি ১৯টি ওয়ার্ডের সর্বত্রই একাধিক নাম ঘোরাফেরা করছে। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, এমনটা হওয়ার কারণ, পুরভোটে জয়ের সম্ভাবনা শতকরা একশো শতাংশ। কোনও ভাবে দলীয় টিকিট পেলেই কাউন্সিলর হওয়া নিশ্চিত এমনটাই মনে করছেন কর্মীরা। দলীয় প্রার্থী বাছাই সভাগুলিতে ভিড়ও চোখে পড়ার মতো হয়েছে। তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে সক্রিয় ভাবে দেখা যায় না, এমন অনেকেও সভায় ভিড় করেছেন। এমনকী, লোকসভার উপনির্বাচনে যে পাঁচটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে ছিলেন, সেই ৬, ৭, ৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও দলীয় প্রার্থী হতে চেয়ে কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে।

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা প্রার্থী বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আমরা মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিতেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বৈঠক করছি। সকলে পাঁচ বছরের জন্য নিজেদের কাউন্সিলর বেছে নিচ্ছেন। কোথাও কোনও গোলমাল নেই।”

শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর আঢ্য বলেন, “আমাদের দলে গণতন্ত্র আছে। কর্মীরা নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা নিজের মতো করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছেন।ম এটা ভাল লক্ষণ। সভাগুলিতে ভিড় প্রমাণ করেছে, শহরে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলেরই শক্তি নেই।’

গত পুরসভার ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৬টি আসন। কংগ্রেস পায় ৫টি আসন। নির্দল প্রার্থী পেয়েছিলেন ১টি আসন। বাকি ১০টি ছিল সিপিএমের দখলে। পরে কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। যে পাঁচ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন এ বার নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না আসন সংরক্ষণের ফলে। এঁরা হলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণা রায় ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টুম্পা রায়। তৃণূমল সূত্রের খবর, কৃষ্ণাদেবীকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এবং টুম্পাদেবীকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় টিকিট দেওয়া হতে পারে। যদিও প্রার্থী বাছাই বৈঠকে ওই দু’টি ওয়ার্ড থেকে কৃষ্ণা ও টুম্পাদেবীর পাশাপাশির অন্যদের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে উঠে এসেছে। কিন্তু সমস্যা হল, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর রয়েছেন শম্পা মোহান্ত। তিনি নিজের জেতা ওয়ার্ড ছেড়ে পাশের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে যেতে ইচ্ছুক নন। তা ছাড়া, বনগাঁ শহর যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। যদিও কৃষ্ণাদেবী বলেন, “দলীয় নেতৃত্ব বসেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ দু’টি ওয়ার্ডেই তো দলীয় কাউন্সিলর।” ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীপ্তেন্দুবিকাশ বৈরাগী ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে চেয়ে দাবি জানিয়েছেন। কৃষ্ণাদেবীর সমর্থন তাঁর পিছনে আছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে পাঁচ জনের নাম উঠে এসেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বনগাঁ মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী সমীর দাসের নামও। তবে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে প্রথম সারিতে রয়েছেন দীপ্তেন্দুবাবুই। তবে কী ভাবে ওই চারটি ওয়ার্ডের জট ছাড়ানো হয়, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও কৌতুহল তৈরি হয়েছে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তাপস মুখোপাধ্যায় আসন সংরক্ষণের ফলে দাঁড়াতে পারছেন না। ওয়ার্ড থেকে কয়েকটি নাম উঠে এসেছে। তবে কাকে প্রার্থী করা হবে, সে বিষয়ে তাপসবাবুর মতামত সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে বলে জেলা নেতৃত্ব জানান। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী হিমাদ্রি মণ্ডল আসন সংরক্ষণের ফলে নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না। তাঁর নাম উঠেছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায়।

৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসাবে নাম উঠেছে জেলা তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি রতন ঘোষ ও স্থানীয় তৃণমূল কর্মী মনোরঞ্জন বিশ্বাসের। রতনবাবু ধারে-ভারে অনেক এগিয়ে। তিনি পুরসভার অধীন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তবে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতারা চাইছেন না রতনবাবুকে প্রার্থী করতে। তাঁদের যুক্তি, সরকারি চাকরি ছেড়ে রতনবাবুর ভোটে না দাঁড়ানোই শ্রেয়। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর (তিনি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন) সুফল হালদার। ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ হয়েছে। এই ওয়ার্ডের বড় অংশের কর্মীদের দাবি, প্রার্থী করা হোক শিক্ষক মনোতোষ নাথকে। সুফলবাবুকে পাশের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে দেওয়া হোক। দলের কাছে কর্মীরা ওই দাবি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভু দাসের পাশাপাশি প্রার্থী হিসাবে উঠে এসেছে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য চন্দন মুখোপাধ্যায়ের নাম। তিনিও ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। চন্দনবাবু বলেন, “আসন সংরক্ষণ হওয়ায় অতীতে ওয়ার্ডটি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এ বার সাধারণ তালিকায় এসেছে ওয়ার্ডটি। তবে এ বার কেন দল আমার কথা ভাববে না?” পাশের ২০ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি জাতিভুক্ত মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। সেখানে শম্ভুবাবুর স্ত্রীকে প্রার্থী করা যেতে পারে বলে চন্দনবাবুর অনুগামীদের মত।

কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীর নাম উঠে আসা মানে তাঁর প্রতি মানুষের ভরসা কমছে, এমনটাই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে সাধারণ ভাবে যাঁরা কাউন্সিলর ছিলেন, তাঁদের এ বার ফের টিকিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব।

জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “আমরা এ বার ওয়ার্ড থেকে মানুষের মতামত নিয়ে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ‌নিয়েছি। যে সব নাম জমা পড়বে, তা ছ’জনের সিলেকশন কমিটির কাছে পাঠানো হবে। তাঁরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। কোনও ওয়ার্ডে বেশি নাম থাকলে ওই কমিটি দু’টি করে নাম আমাদের কাছে পাঠালে আমরা তা থেকে প্রার্থী বেছে নেব।”

ওয়ার্ডের বেশির ভাগ মানুষ যদি বর্তমান কাউন্সিলরের বদলে অন্য কাউকে প্রার্থী করতে চান, তা হলে পাশের ওয়ার্ডে কাউন্সিলরকে দাঁড় করানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। সিলেকশন কমিটি ওই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE