Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছেলের স্বপ্নপূরণে উদ্যোগী বাবা-মা

সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল। কালিন্দী নদীর ধারে ওই জঙ্গলের কাছে মাঝে মধ্যেই বাঘের গর্জন শোনা যায়। দিনের আলো ফুটতেই হরিণ শাবক, বুনো শুয়োর, বাঁদরদের আনাগোনা বাড়ে। জঙ্গল ঘেঁষা এই এলাকার মালেকান ঘুমটি গ্রামটি কার্যত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।

পাঠাগারের উদ্বোধন। নিজস্ব চিত্র।

পাঠাগারের উদ্বোধন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল। কালিন্দী নদীর ধারে ওই জঙ্গলের কাছে মাঝে মধ্যেই বাঘের গর্জন শোনা যায়। দিনের আলো ফুটতেই হরিণ শাবক, বুনো শুয়োর, বাঁদরদের আনাগোনা বাড়ে। জঙ্গল ঘেঁষা এই এলাকার মালেকান ঘুমটি গ্রামটি কার্যত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সেখানেই পথ চলা শুরু হল দীঘির পাঠাগারের। মেধাবী ছাত্রের শেষ ইচ্ছা পূরণে উদ্যোগী হল তাঁর পরিবার। পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা, চিকিত্‌সার ব্যবস্থা-সহ সুন্দরবন এলাকার স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় সাহায্য করাই যার উদ্দেশ্য।

দিন কয়েক আগে এই শিশু পাঠাগারের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ সুন্দর গায়েন। এলাকার শিশুদের নিয়ে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তির নানা অনুষ্ঠান করা হয়। শিশুদের কাছে পাঠাগারের ভূমিকা কী, তা নিয়ে আলোচনা করেন প্রদীপ বিশ্বাস, স্থানীয় কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল মণ্ডল, সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়, স্বদেশ ভট্টাচার্য-সহ বিশিষ্টরা। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন অগ্রগামী সঙ্ঘের সহযোগিতায় দীঘির গাঙ্গুলি ফাউন্ডেশন গত মে মাসে মালেকান ঘুমটি গ্রামে গড়ে তুলেছিল শিশুদের ছবি আঁকার স্কুল রামধনু। বিনা বেতনে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের কোচিংয়ের ব্যবস্থাও আছে সেখানে। আগামী দিনে সুন্দরবন এলাকার ১২টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের চোখ পরীক্ষা এবং চিকিত্‌সায় সাহায্যের পরিকল্পনা নিয়েছে এই সংগঠনটি। ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, গত এপ্রিল মাসে এমবিএ-র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কলকাতার কৈখালির বাসিন্দা দীঘির গঙ্গোপাধ্যায় দিল্লিতে এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর ইচ্ছা ছিল, পড়াশোনা শেষ করে সুন্দরবনের মানুষের জীবন ও জীবিকার উপরে কাজ করবেন। তাঁর সেই ইচ্ছাকে সার্থক করতে পরিবারের আর্থিক সাহায্যে গড়ে তোলা হয়েছে এই ফাউন্ডেশন। কাজের ক্ষেত্র হিসাবে বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সুন্দরবন-লাগোয়া ছোট্ট এই দ্বীপটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে মৃত ছাত্রের মা সীমা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘দীঘির কথা-জন্মদাত্রীর দিনলিপি’ নামের একটি পুস্তক প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেটি প্রকাশ করে প্রধান শ্যামলবাবু গ্রামবাসীদের কল্যাণের উদ্দেশে গড়ে ওঠা এই সংগঠনকে সব রকম ভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।

দীঘিরের বাবা সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, ছেলের শেষ ইচ্ছা পূরণের স্বপ্ন খানিকটা হলেও বাস্তবায়িত হওয়ায় ভাল লাগছে। আরও ভাল লাগবে, যখন এই এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে এই সংগঠন বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠবে। হাসনাবাদে ইছামতী এবং নেবুখালিতে সাহেবখালি নদী পেরিয়ে ওই গ্রামে যাওয়া যায়।

আয়লার সময়ে গ্রামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। পরে জীবিকার সন্ধানে বহু মানুষ ভিটে-মাটি ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। আর যারা জমি আঁকড়ে পড়েছিলেন, তাঁদের পাশেই দাঁড়াতে এগিয়ে এল এই ফাউন্ডেশন।

অন্য বিষয়গুলি:

hingalgunj library southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE