সমাবেশের পথে। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা যাওয়ার জন্য ভাড়া করা হয়েছে একটা আস্ত ২২ কামরার ট্রেন। সেই ট্রেনই মঙ্গলবার বিকেলে ছাড়ল নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন থেকে। ট্রেনের কয়েক হাজার যাত্রী, সকলেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক।
দুপুর একটা চল্লিশ। হলদিবাড়ি থেকে শিয়ালদহগামী তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস সবে ঢুকেছে জলপাইগুড়ি স্টেশনে। রেলের তরফ থেকে সমানে ঘোষণা করা হচ্ছে, যাঁদের রিজার্ভেশন নেই, তাঁরা সংরক্ষিত কামরায় উঠবেন না। স্টেশনে তখন হাজির কয়েক শো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। আর সেই ভিড় সামলাতে মোটে চার-পাঁচ জন আরপিএফ। সংরক্ষিত কামরায় জিগ্গেস করে তোলা শুরু করলেন তাঁরা। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে জলের তোড়ের মতো তৃণমূল সমর্থকেরা উঠতে শুরু করলেন সংরক্ষিত কামরাতেই।
একুশে জুলাই উপলক্ষে যদি এমন ভিড় হয় জলপাইগুড়ি আর আলিপুরদুয়ার থেকে, তা হলে কেন পিছিয়ে থাকবে কোচবিহার? উত্তরবঙ্গ থেকে তিস্তা তোর্সা, কোনও ট্রেনই তাঁরা বাদ দিলেন না। তৃণমূলের হিসেব অনুযায়ী মঙ্গলবার ছ’হাজার কর্মী সমর্থক রওনা দিয়েছেন কলকাতার উদ্দেশে। ফলে সব ট্রেনেই ঠাসাঠাসি ভিড়।
এই ভিড় কিন্তু রাস্তায় বেড়েছে। কারণ, মালবাজার, চোপড়া থেকে মালদহ, মাঝের সব স্টেশনেই ট্রেনগুলির অপেক্ষায় ছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। বুকে ব্যাজ, হাতে পতাকা, মুখে স্লোগান। ট্রেন ঢুকতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সকলে। ফলে ভিড় বাড়তে বাড়তে গিয়েছে।
উত্তরবঙ্গ থেকে এ বার এমন সমর্থকের ঢল যে হবে, সেটা আগেই আন্দাজ করেছিলেন তৃণমূল নেতারা। অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, উত্তরবঙ্গ এ বার যেমন দলকে সরকারে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তেমনই একুশে জুলাইয়ের মঞ্চের চার দিক সমর্থকে ভাসিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে তাক লাগিয়ে দেবে।
এই ভিড়ে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না মালদহের মতো জেলাও। ভোটে হেরে গেলেও কলকাতা ভরানোর দৌড়ে তারাও কর্মী সমর্থকদের নামিয়ে দিয়েছে ময়দানে। জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের দাবি, এই জেলা থেকে ২০ হাজার কর্মী সভায় যাচ্ছেন। শুধু ট্রেনই নয়, জেলার ১৫টি ব্লক থেকে অন্তত ৩০টি বাসও ভাড়া করা হয়েছে। যাচ্ছে অনেক ছোট গাড়িও। সব দেখেশুনে জেলার কয়েক জন কর্মী-সমর্থক বলেই ফেললেন, এই ‘জোয়ার’ কি জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবে? নাকি দলীয় নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব বাড়বে মালদহের? আব্দুল করিম চৌধুরীও এর মধ্যেই তাঁর ছেলেদের সঙ্গে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থককে কলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
জয়ী নেতাদের উৎসাহ স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। উত্তর দিনাজপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানালেন, তাঁদের এলাকা থেকে সমর্থকেরা যাচ্ছেন রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে। জেলা ও ব্লক স্তরের বেশির ভাগ নেতাই এর মধ্যে কলকাতা পৌঁছে গিয়েছেন। যেমন পৌঁছে গিয়েছেন জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। কলকাতা থেকে তিনি জানালেন, তাঁদের ১০-১২ হাজার লোক এর মধ্যেই রাজধানী শহরে পৌঁছে গিয়েছেন। বাকিদের আনার জন্য ভাড়া করা হয়েছে একটি ট্রেন।
২২ কামরার এই ট্রেনটি মঙ্গলবার নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে রওনা দিয়েছে। গন্তব্য চিৎপুরে কলকাতা স্টেশন। সেখানেই কারশেডে থাকবে ট্রেনটি। ফেরার পথে ফের সমর্থকদের নিয়ে চলে আসবে নিউ আলিপুরদুয়ার। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে ‘কশান মানি’-সহ প্রায় ২২ লাখ টাকা ভাড়া পড়েছে ট্রেনটির। তবে বেশির ভাগটাই ফেরতযোগ্য। ট্রেনটি স্টেশনে থামবে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা উঠতে পারবেন না।
সৌরভের পড়শি জেলা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের খাসতালুক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর জেলা থেকে প্রায় আট হাজার কর্মী কলকাতা যাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গ, তিস্তা তোর্সা— কোনও ট্রেনই তাঁরা বাদ দিচ্ছেন না। ফলে ঠাসাঠাসি ভিড়।
সব জেলাতেই তৃণমূলের দাবি, টিকিট কেটেই ট্রেনে উঠছেন দলীয় কর্মীরা। কিন্তু সাধারণ টিকিট কেটে সংরক্ষিত কামরায় উঠতে কেউ কি দেখার আছে? জলপাইগুড়ি স্টেশনের দৃশ্যই বলে দিচ্ছে, পরিস্থিতি কেমন। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা রঞ্জন সরকারের বক্তব্য, চিকিৎসার জন্য তাঁর মা কলকাতায় যাচ্ছেন৷ কিন্তু যে ভাবে শাসকদলের লোকেরা কামরা দখল করে ফেলল, তাতে করে ওই বৃদ্ধা কতটা সুস্থ অবস্থায় কলকাতায় পৌঁছবেন, তা বুঝে পাচ্ছেন না তিনি৷ যদিও আরপিএফের আধিকারিক সোহেব আলম খান বলেন, টিকিট না থাকায় ট্রেন ওঠা শাসকদলের অনেক কর্মীকেই এ দিন নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবু চিন্তা রয়েই যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের মনে। তৃণমূলের ট্রেন ভাড়া করা নিয়ে এক জন তো বলেই ফেললেন, ওঁদের ভাড়া করা ট্রেনে সাধারণ যাত্রীরা উঠতে পারবে না, কিন্তু সাধারণ ট্রেনের আসন ওঁরা দখল করে নেবেন!
এ সব শুনে বারবার আশ্বাস ও অভয় দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু দুর্ভোগ নিয়েই রাত কাটল যাত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy