ছবি— পিটিআই।
প্রত্যাশিত ভাবেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ২০২৪ সালের ভোটের নান্দীমুখ করে রাখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনি ভোট-পরবর্তী বিজেপি-বিরোধী জোটের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বলেই মনে করছে তৃণমূলের একটি অংশ। মমতার বক্তব্যের নির্যাস— ভোট বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে না। আর তারা গরিষ্ঠতা না-পেলেই অন্যরা (বিরোধীরা) এক হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ভোটের আগে নয়, ভোটের পরের জোটের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন তৃণমূলনেত্রী।
সভামঞ্চের কাছের তৃণমূল সমর্থকদের হাতে ছিল ব্যানার। তাতে লেখা, ‘বাঙালি প্রধানমন্ত্রী চাই।’ তবে মমতা সে সব দিকে হাঁটেননি। তিনি জানান, ২০২৪ সালে বিজেপি সর্ববৃহৎ দল হবে না। তাঁর কথায় ‘‘বিজেপি যাতে একক গরিষ্ঠ দল হতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা হলেই সবাই এক হয়ে যাবে।’’ মঞ্চ থেকে স্লোগান তোলেন, ‘‘চব্বিশে বিজেপির কারাগার ভাঙো, মানুষের সরকার আনো।’’
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মমতা তাঁর বক্তৃতায় কংগ্রেসের নামটুকুও উচ্চারণ করেননি। আক্রমণ করেছেন বিজেপিকে। এমনকি, আক্রমণ করেছেন সিপিএমকেও। কিন্তু কংগ্রেস নিয়ে তাঁর বক্তৃতায় কোনও উচ্চবাচ্য ছিল না। যে সূত্রের তৃণমূলের নেতারা আরও মনে করছেন যে, কংগ্রেসকে ‘বিরোধী শক্তি’ হিসেবে আর ধর্তব্যের মধ্যে আনছেন না মমতা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে দলের লক্ষ্য ‘৪২-এ ৪২’ বলে ঠিক করে দিয়েছিলেন মমতা ২০১৮ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই। ২০২২-এর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তিনি কোনও সংখ্যা বলেননি। কিন্তু বলেছেন, ‘‘রাজ্যে সব আসনে জিততে হবে। অসম, ত্রিপুরাতেও ভাল ফল চাই।’’ ২০২৪ সালে মানুষের সরকার গড়ার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বলেন, ‘‘বড়লোকের নয়, দেশে গরিবের প্রধানমন্ত্রী চাই।’’
মুষলধারায় বৃষ্টি চললেও মমতা মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই থামে বর্ষণ। বৃষ্টিভেজা কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘মানুষের বৃষ্টি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিক ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।’’ বক্তৃতার শুরুতেই ওই কথা বলে মমতা বুঝিয়ে দেন, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁর বক্তৃতার মূল সুর বাঁধা থাকবে বিজেপির সমালোচনাতেই। সেই সুরেই মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে আছে মানুষ। কারণ, তৃণমূলের মেরুদণ্ড আছে। আর ওদের মেরুদণ্ডের এক পাশে সিবিআই আর অন্য পাশে ইডি।’’ তবে পাশাপাশিই মমতা বলেছেন, ‘‘আমি ঝুঁকি না। আপনারা আমাকে ঝোঁকাতে পারবেন না। আমায় ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখাবেন না। টাকা বন্ধ করারও ভয় দেখাবেন না। আমি হিম্মত নিয়ে লড়াই করি। আমার সেই লড়াই জারি থাকবে।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যে জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের কথা শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের প্রচারে এবং মমতার কথায়। তিনি যে সেই সব প্রকল্প চালিয়ে যেতে চান, তা বুঝিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল থাকলে ফ্রি-তে রেশন পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবন্ধু, ঐক্যশ্রী, সবুজসাথী— সব পাবেন।’’ ডেউচা পাঁচামিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়ে গেলে বাংলায় বিদ্যুতের অভাব তো থাকবেই না, উল্টে রাজ্য বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে বলেও জানান মমতা।
এর পরেই তিনি চলে যান সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণে। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম একবারেও বলেননি মমতা। সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তাতে দিয়েছেন নিজস্ব ছোঁয়া।
যেমন, বিভিন্ন প্যাকেটজাত পণ্যের উপর জিএসটি বসানোর সমালোচনা করতে গিয়ে সমাবেশে উপস্থিতি এক তৃণমূল সমর্থকের থেকে চেয়ে নেন মুড়ি। সেই মুড়ি হাতে স্লোগান তোলেন, ‘‘আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও।’’ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মুড়িতেও জিএসটি? সাধারণ মানুষ খাবে কী?’’ চিকিৎসাক্ষেত্রে জিএসটি চালু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রোগীর বিছানাতেও এখন জিএসটি। এর পরে মৃতদের খাটেও কি জিএসটি বসবে?’’
মুড়ির পরে মমতা মঞ্চে তুলে নেন সমাবেশে কর্মীদের নিয়ে আসা প্রতীকী গ্যাস সিলিন্ডারে। সেটি অভিনেতা-সাংসদ দেবের হাতে ধরিয়ে দেন। নিজে স্লোগান তুলতে থাকেন, ‘‘গ্যাস, পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়ানোর সরকার, আর নেই দরকার।’’ ডলারের অনুপাতে টাকার দাম কমে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রকে আক্রমণ করার পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য না মেটানোরও নিন্দা করেন মমতা। সেই টাকা না পেলে আন্দোলন দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy