প্রতীকী চিত্র।
জঙ্গি দলে তাদের হাতেখড়ি হয়েছিল নব্য জেএমবি-র হাত ধরে। কিন্তু সেই মুর্শিদ হাসান ও মোশারফ হোসেনকে আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার জঙ্গি হিসেবে পাকড়াও করেছে এনআইএ। তার ফলেই আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার সঙ্গে জেএমবি-র ঘনিষ্ঠতাও সামনে এসেছে। ফলে এ রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামাঞ্চলে জেএমবি-র প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আর কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং আল কায়দার শিকড় কত দূর গিয়েছে তার হদিস পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা। এ কাজে কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে কাজ করবে বলেই খবর। সোমবার বিকেলে এ ব্যাপারে কথা বলতে এনআইএ-র ডিআইজি নবান্নে গিয়েছিলেন বলেও সূত্রের দাবি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে গত বছর জুনে পাকড়াও হওয়া নব্য জেএমবি জঙ্গি রবিউল ইসলাম জেরায় জানিয়েছিল, সে মুর্শিদ ও মোশারফ নামে দু’জনকে জঙ্গি দলে এনেছে। কিন্তু তার পর থেকে ওই দু’জনের খোঁজ মেলেনি। তখনই সম্ভবত তাঁরা কেরলে চম্পট দিয়েছিল। কিন্তু জেএমবি-র জঙ্গিরা আল কায়দায় কী ভাবে গেল তারও উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। এই ঘনিষ্ঠতা ধৃত জঙ্গিরাও স্বীকার করেছে বলে খবর। এনআইএ সূত্রের দাবি, ধৃত লিউইয়ন জেরায় জানিয়েছে, আইএস-বিরোধী ইরানের নিহত সামরিক নেতা কাশেম সোলেমানিকে সে ‘আদর্শ’ মনে করে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কাউন্টার টেররিজ়ম-এর গবেষক অ্যালিস্টার রিড তাঁর একটি গবেষণাপ্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে মূলত আইএস-এর হাত থেকে জেহাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশে শাখা খোলে এবং হুজি, আনসারুল্লা বাংলা, লস্কর, জইশের মতো আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলিকে এক ছাতার তলায় আনলেও জেএমবি আইএস-ঘনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু জেএমবি-র চাঁইরা বারবার পাকড়াও হতেই আইএসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং অস্তিত্ব রক্ষায় আল কায়দার ছাতায় তলায় জেএমবি জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা। আবার এ রাজ্যে বিভিন্ন এলাকায় জেএমবি-র সক্রিয় সংগঠন রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘পালানোর হলে তো কবেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে হারিয়ে যেত!’
গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, মৌলবাদী প্রচারে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং সমস্যার মাধ্যমে জঙ্গি মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রথমে ধর্মান্ধতা রয়েছে এমন যুবকদের কারও বাড়িতে বা বেআইনি মাদ্রাসায় ভোজসভা বা ‘দাওয়াত’-এ আমন্ত্রণ করা হত এবং সেখানে স্থানীয় সমস্যার বিষয়ে উত্তেজক কথা বলতে বলতে মৌলবাদী চিন্তা মাথায় ঢোকানো হয় এবং বারবার এই অনুষ্ঠানে এমন মগজ ধোলাই চলতে থাকে। তার পরে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করানো হয়। স্থানীয় কয়েক জন যুবক-যুবতীকে নিয়ে ছোট চক্র বা মডিউলও তৈরি হয়। এই ধরনের প্রক্রিয়াকে মনোহর পর্রীকর ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যানালিসিস-এর ফেলো আদিল রশিদ তাঁর প্রবন্ধে ‘থিঙ্ক লোকাল, অ্যাক্ট লোকাল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাদুড়িয়ার জঙ্গি তানিয়া পরভীনের ক্ষেত্রেও একই নজির দেখা গিয়েছিল।
স্থানীয় চক্রগুলিই এখন তাই গোয়েন্দাদের ‘মাথাব্যথা’!
আরও পড়ুন: বিএসএফ মেরে বন্দুক লুটের ছক কষেছিল জঙ্গিরা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy