জমি আন্দোলনের ধারেকাছেও ছিল না যারা, প্রাণ দিয়ে আন্দোলনের মাসুল গুনতে হল তাদেরই।
দু’টি নাম: মফিজুল আলি খান (২৮) এবং আলমগির মোল্লা (২৫)। ভাঙড়ে জমি আন্দোলন এবং তার জেরে পুলিশ-গ্রামবাসী খণ্ডযুদ্ধের মাঝে মঙ্গলবার গুলি লেগে মারা গিয়েছেন দু’জনই।
প্রথমে ডিরোজিও কলেজ এবং পরে ভাঙড় কলেজে পড়াশোনা করেছেন আলমগির। স্নাতক হয়েছেন। ইদানীং চাকরির পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সঙ্গে ফ্রিজ, এসি মেশিন সারানোর তালিমও চলছিল। ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য খুব পরিশ্রম করছিল দাদা,’’ বললেন বোন নাসিমা। পরিবার পরিজনেরা জানালেন, ভাত খেয়ে বিকেলের দিকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন কাশীপুর থানার স্বরূপনগরের বাসিন্দা আলমগির। বাড়িতে বলেছিলেন, ‘‘গণ্ডগোল হচ্ছে চারদিকে, একটু খবর নিয়ে আসি।’’
খবর আনতে গিয়ে নিজেই ‘খবর’ হয়ে গিয়েছেন তরতাজা যুবক। বাড়ির কাছেই পুলিশ-জনতা গোলমালের মধ্যে পড়েন তিনি। গুলি লাগে গলায়, ডান হাতে। ঘটনাস্থলেই মারা যান আলমগির।
বাবা খেতাব আলি মোল্লা সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। দলের মিটিং-মিছিলে নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। সদ্য সন্তানহারা বাবার আক্ষেপ, ‘‘ছেলেটা কোনও কিছুর মধ্যে থাকত না। অথচ, এ ভাবে মরতে হল। যারা এ জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি চাই।’’
অন্য দিকে, মঙ্গলবার বিকেলে কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বকুলতলার বাসিন্দা, ইটভাটা শ্রমিক মফিজুল। স্ত্রী সাবেরা বিবিকে বলে যান, ফিরতে রাত হবে। অনেক কাজ। সে রকম হলে রাতে ফিরবেন না।
বিকেল তখন প্রায় ৪টে। বাড়ির কাছেই চায়ের দোকানে চা খেতে দাঁড়ান মফিজুল। মঙ্গলবার দিনভর অশান্তি ছড়িয়েছিল এলাকায়। বিকেলের দিকেও পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত গোলমাল বাধে জমি আন্দোলনকারীদের। চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখে চায়ের গ্লাস ফেলে ছুটতে শুরু করেন মফিজুল। তারই মধ্যে গুলি এসে লাগে তাঁর তলপেটে। রক্তাক্ত যুবক পরে মারা যান এসএসকেএম হাসপাতালে।
ছোট ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার মফিজুলের। স্ত্রী সাবেরা বলেন, ‘‘অভাবের সংসার। কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন উনি। অথচ, এ ভাবে মরতে হল। এখন ছেলেমেয়েদের কী ভাবে মানুষ করব, কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy