হাকিম আলি ও মঙ্গল আহমেদ কারিগর
খবর এসেছিল গত অক্টোবরেই। মদিনা থেকে মক্কায় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়েছে তাঁদের বাস। এর পরে আর শান্তিপুরের বাসিন্দা দুই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরিবারের আশঙ্কা, সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। কিন্তু দেহ শনাক্তকরণ করা যায়নি। তার জন্য পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ-র নমুনা মিলিয়ে দেখা প্রয়োজন। কিন্তু নদিয়া জেলা প্রশাসন তা এখনও সংগ্রহ করে উঠতে না পারায় বিষয়টি থমকে রয়েছে।
শান্তিপুরের মালঞ্চ স্ট্রিটের মঙ্গল আহমেদ কারিগর ও কারিগরপাড়ার হাকিম আলি সৌদি আরবের রিয়াধে শপিং মলে কাজ করতেন। হাকিমের বাড়ি ফেরার কথা ছিল অক্টোবরের শেষে। তার আগেই তাঁরা কয়েক জন মক্কা যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। গত ১৬ অক্টোবর মঙ্গল বাড়িতে ফোন করে তা জানান। সে-ই শেষ। সেই রাতেই মদিনা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে বাস দুর্ঘটনায় ৩৯ জন তীর্থযাত্রীর মধ্যে ৩৫ জন মারা যান। বাড়িতে তখনই খবর পৌঁছয়নি। দু’জনের আর খবর না মেলায় খোঁজ নিতে গিয়ে বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানতে পারেন। এর পরেই তাঁরা জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন।
গত ১৮ নভেম্বর সৌদি আরবের ভারতীয় কনসুলেট থেকে চিঠি দিয়ে নদিয়ার জেলাশাসককে জানানো হয়, মৃতের তালিকায় ওই নামের দু’জন রয়েছেন। তাঁদের শনাক্ত করার জন্য পরিবারের লোকের ডিএনএ-র নমুনা পাঠাতে হবে। তার পরে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ হয়নি।
বুধবার হাকিমের ভাই মোকিম আলি বলেন, “ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কোথায় কী নমুনা দিতে হবে, কেউ তা জানাচ্ছে না।” তাঁদের আক্ষেপ, নদিয়া জেলাশাসক, রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলের দাদা সাব্বির আহমেদ কারিগরের প্রশ্ন, “আর কত দিন আমাদের ঘুরতে হবে?”
কেন আটকে আছে নমুনা সংগ্রহ?
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২১ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নমুনা সংগ্রহের জন্য জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে (সিএমওএইচ) চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁরা রানাঘাট পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য ফরেন্সিক বিভাগ থেকে ‘কিট’ আনিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু পুলিশ জানিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করণীয় নেই।
স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, নিয়ম অনুযায়ী আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ফরেন্সিক বিভাগ থেকে কিট এনে তাঁদের দেবে। তাঁরা আবার নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশকে দেবেন। কিন্তু রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, “দুর্ঘটনা অন্যত্র ঘটায় আদালতের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।”
আইনজীবীরা অনেকেই অবশ্য বলছেন, পুলিশ মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করলে তিনিও অনুমতি দিতে পারেন বা প্রয়োজনে জেলা জজের কাছে বিষয়টি পাঠাতে পারেন। ঘটনা যেখানেই ঘটুক, প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকলে অনুমতি পাওয়ার কথা। সিএমওএইচ তাপস রায় বলেন, “স্বাস্থ্যভবন ও জেলাশাসককে সব জানিয়ে জানতে চেয়েছি, এ ক্ষেত্রে কী করণীয়।”
জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “পুলিশ সুপার এবং সিএমওএইচ, দু’জনের সঙ্গেই কথা বলেছি। সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
(সহ-প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy