বাজেট শুনছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
মাস দু’য়েকের মধ্যেই রাজ্য জুড়ে পুর-ভোট। বছর পেরোলে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ রাজ্য বাজেটে ১১টি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। প্রকল্পগুলি যে মূলত নতুন কয়েক লক্ষ উপভোক্তা তৈরির লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে তা বাজেট বক্তৃতা থেকে স্পষ্ট। এ জন্য বাড়তি যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে, তার সংস্থান করতে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন ছাড়-প্রকল্প ঘোষণা করে বকেয়া কর ঘরে তোলার পরিকল্পনা করেছেন।
এ বারের বাজেটে সব মিলিয়ে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। রাজস্ব খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা আসবে কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য অংশ এবং কেন্দ্রীয় অনুদান থেকে। বাকি ৭০ হাজার কোটি টাকা আয় করবে রাজ্য নিজে।
বাজেট পেশের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কেন্দ্রের আদায় করা করের যে অংশ রাজ্য পায়, সেই বাবদ ১১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে পাবে না রাজ্য। বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান বাবদ ৩৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা পাওয়া যাবে না। জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ এখনই পাওনা রয়েছে ১৩০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের থেকে ৫০ হাজার কোটির বেশি পাওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী ৩৮ হাজার কোটি টাকা বকেয়ার তালিকা দিয়েছিলেন। তখন কর বা অনুদান না-পাওয়ার বিষয়টি জানা ছিল না’’
আরও পড়ুন: পুরভোটের সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশিত
অর্থমন্ত্রীকে সমর্থন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যখনই দেখা হয়, তখনই বলি। বুলবুলের পরে বললেও একটা টাকাও পাইনি। প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা পাওনা হয়ে গেল! ৫০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করতে হয়। তার পরেও জনমুখী বাজেট হয়েছে। প্রবল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাধ্যমতো সব করার চেষ্টা করেছি। উন্নয়নের কাজে বরাদ্দ নিয়ে বঞ্চনা করা উচিত নয়।’’
We have presented a people's Budget without having to sell any of the state PSUs. Simultaneously, we've spread smiles across communities.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) February 10, 2020
The Centre can, for a change, help make these smiles broader by working with the States.
We'll let the people decide which Budget is better.
নতুন যে ১১টি প্রকল্পের কথা এ দিন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সেগুলির মূল লক্ষ্য চা-বাগান, তফসিলি জাতি-জনজাতি এবং সীমান্ত ঘেঁষা মতুয়া প্রভাবিত এলাকাগুলি। বিরোধীদের মতে, গত লোকসভা ভোটে এই এলাকাগুলিতেই তৃণমূল ধরাশায়ী হয়েছে। এই সব প্রকল্প ঘোষণা হারানো ভোট ব্যাঙ্ক উদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা। সেই কারণেই তফসিলি জাতি ও জনজাতির বয়স্কদের জন্য মাসিক এক হাজার টাকা পেনশন, চা-বাগানে ঘর তৈরি বা মতুয়া গুরু হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা বাজেটে বলা রয়েছে।
এ ছাড়া, প্রতি তিন মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচে ছাড় পাবেন গরিব মানুষেরা। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বিমার প্রিমিয়ামও সরকার দিয়ে দেবে। অর্থ-কর্তাদের মতে, ‘‘প্রকল্পগুলির মাধ্যমে সরাসরি উপভোক্তাদের কাছে কিছু না কিছু সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।’’
গত লোকসভা ভোটে যুব সমাজের বড় অংশও তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তাদের কাছে টানতে সরকারি চাকরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রায় তিন হাজার তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা কেন্দ্র এবং বেকার যুবক-যুবতীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থাও করবে সরকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আরও ১০০টি পার্ক তৈরির কথাও জানান অমিতবাবু।
তবে এই ১১টি প্রকল্প ছাড়া বাজেটে সামাজিক উন্নয়ন, পরিকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ বা নগরোন্নয়নে বিশেষ কিছু ঘোষণা করা হয়নি বলেও বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁদের মতে, কৃষিনির্ভর পশ্চিমবঙ্গে চাষিদের জন্য বাড়তি কিছু ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী। লগ্নি টানতেও বাজেটে তেমন কোনও দিশা নেই ।
অর্থমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৯ লক্ষ ১১ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। ২০২০-২১ এর বাজেট প্রস্তাব কর্মসংস্থান আরও বাড়াবে। যদিও শিল্পে মন্দা, সামাজিক ও পরিকাঠামো উন্নয়নে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রকল্প না-থাকায় কী ভাবে কর্মসংস্থান হবে, তা নিয়ে ধন্দে অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy