প্রতীকী ছবি।
কয়লা ও গরু কাণ্ডের তদন্তে নেমে চক্ষু চড়কগাছ সিবিআই, আয়কর দফতরের। এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, কয়লা পাচারের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা এবং গরু পাচারে অভিযুক্ত এনামুল হকের বিভিন্ন আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে যে সব নথি পাওয়া গিয়েছে, তাতে অন্তত রাজ্যের ১০০টি থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি)-র নাম পাওয়া গিয়েছে।
প্রতি মাসে গরু ও কয়লা চক্র থেকে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের আট-ন’টি জেলার কর্মরত ওই ওসি-রা ‘মাসোহারা’ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কয়লা চক্রের নিয়ন্ত্রক হিসাবে পরিচিত এক ওসি এবং গরু চক্রের সঙ্গে যুক্ত দুই ওসি’কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ, তাঁরা ‘নানা অছিলায়’ এখনও তদন্তে যোগ দেননি। সিবিআই সূ্ত্রের দাবি, লালা-এনামুলের খাতায় নাম থাকা সব ওসি’দেরই ধীরে ধীরে আয়কর ও সিবিআই তদন্তের সামনে আসতে হবে।
তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা পাচারে অভিযুক্ত লালার নিতুড়িয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে ১৫ হাজার পাতার ‘খাতা’ পাওয়া গিয়েছে, তাতে সব পুলিশ অফিসারের খুঁটিনাটি রয়েছে। দাবি, গত চার-পাঁচ বছরে কয়লা থেকে কোন থানার নামে কত টাকা গিয়েছে, তা-ও নাকি নথিভুক্ত রয়েছে লালার হিসাবের খাতায়। আয়কর কর্তাদের দাবি, লালা নিজেই সই করে ওই নথি তাঁদের হাতে সজ্ঞানে তুলে দিয়েছেন। যে কম্পিউটার থেকে সেই নথি মিলেছিল, তা আমদাবাদের ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের দাবি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আসানসোল কমিশনারেট, বীরভূম, হুগলি এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ইটভাটা রয়েছে, এমন এলাকার ওসিরা কয়লা থেকে মাসোহারা পেয়েছেন। বাঁকুড়া সদর থানার ওসি অশোক মিশ্রকে ইতিমধ্যেই সিবিআই ডেকে পাঠিয়েছে। লালার হিসাবরক্ষক নীরজ সিংহের ফোনে থাকা ‘মিশ্রজি’ কে, তা তাঁরা মিলিয়ে নিয়েছেন বলেই সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি। সিবিআই কর্তাদের কথায়, তবে মিশ্রতেই শেষ নয়। কয়লা করিডরের অনেক ওসি’কেই একে একে ডেকে পাঠাবেন তাঁরা।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, লালা এবং এনামুলের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের দাবি, কয়লার গাড়িতে গরু কিংবা গরুর গাড়িতে কয়লা পাচার হয়েছে দেদার। তদন্তকারীদের অভিযোগ, যে শ’খানেক ওসির নাম ওই দুই পাচার চক্রে উঠে এসেছে, তাঁরাই শুধু
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গত চার-পাঁচ বছরে কয়লা এবং গরু করিডরের বিভিন্ন থানাতে পোস্টিং পেয়েছেন। ফলে কয়লা ও গরুর গাড়ির রাজ্যজুড়ে যে প্যাড চলেছে, সে সবও ওই ওসি’রা নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কাঁচা পয়সার এই কারবারে অনেক ওসি আবার বেশি দিন টিকতে পারেননি। লালার খাতায় তাঁদেরও নাম রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। আয়কর দফতর অভিযুক্ত ওই পুলিশ অফিসারদের আয়কর দেওয়ার পরিমাণ আর নামী-বেনামি সম্পত্তির হদিস করতেও শুরু করেছে বলে
জানা গিয়েছে।
সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় ছ’বছর পরেও তদন্ত শেষ হয়নি। হিমসিম দশা কাটছে না। আর কয়লা এবং গরুর যে সুবিশাল জাল ধরা পড়েছে তার তদন্ত কবে যে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। সমান্তরাল অর্থনীতির এই বাণিজ্যে রাজ্য প্রশাসন ছাড়াও কিছু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তাদেরও গভীর যোগাযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy