প্রতীকী ছবি।
গাছ মুড়িয়ে খেয়ে ফেলেছিল প্রতিবেশীর গরু। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে উঠল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির পাখিরালয়। গুলি, বোমা, ভাঙচুরের পাশাপাশি গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেল এক জনের। এক মহিলা-সহ গুরুতর জখম পাঁচ জন। গোটা ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ।
এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত। ঘণ্টা চারেকের চেষ্টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, গোটা ঘটনার জন্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দায়ী। যদিও রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে বিজেপির আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতী রয়েছে। তারা জমি দখল করতে চায়। তা করতে গিয়েই এই সংঘর্ষ। ওদের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে আমাদের এক কর্মীর। আর দোষ চাপানো হচ্ছে তৃণমূলের নামে!’’ বিজেপি যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়বাবু সত্যি কথা বলছেন না। তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত ২ জওয়ান, আহত ৪
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পাখিরালয় পঞ্চায়েতের সদস্য সইফুদ্দিন মোল্লা এবং জয়নাল মোল্লার মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিবাদ। তাঁরা দু’জনেই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। এ দিন সকালে জয়নালের পোষা একটি গরু সইফুদ্দিনের বাড়ির সীমানায় ঢুকে পড়ে। এর পর গরুটি বেশ কয়েকটি গাছ মুড়িয়ে খেয়ে নেয়। সেখান থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। সইফুদ্দিন এর পরে সদলবলে গরুটাকে নিয়ে জয়নালের বাড়িতে হাজির হন। তাঁর গরু কেন সইফুদ্দিনের সীমানায় গিয়েছে? এ নিয়েই প্রথমে বচসা বাধে দু’পক্ষের। এর পর তা বাড়তে থাকে। প্রথমে হাতাহাতি, পরে তা গুলি-বোমার লড়াইয়ে পরিণত হয়।
গুলিতে জখম এক গ্রামবাসী।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ১০-১২ রাউন্ড গুলি চলে। গোটা পাঁচেক বোমাও ছোড়া হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জয়নালের ভাই ময়না মোল্লার। জখম হন প্রতিবেশী সুকিয়া বিবি, রফিক মোল্লা, খালেদা মোল্লা, সাবির হোসেন মোল্লা-সহ ৫ জন। ময়নার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ চেহারা নেয়। দু’পক্ষের লোকজনই গ্রামে বোমা ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ। ভাঙচুর চালিয়ে আশেপাশের বাড়িগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের প্রায় ৩০টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয় ৭-৮টি দোকানও। পুড়িয়ে দেওয়া হয় গ্রামের পাশের নদীতে বেঁধে রাখা নৌকাগুলি। প্রাণে বাঁচতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
খবর পেয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। কিন্তু, কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় ‘ভয়ে’ তারা গ্রামে ঢোকেনি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত। এখনও গ্রামে টহল দিচ্ছে পুলিশ। একাধিক পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত জয়নাল এবং সইফুদ্দিন-সহ দু’পক্ষের লোকজনের খোঁজ চলছে। ঘটনার পর তাঁরা প্রত্যেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে তাদের দাবি। তাঁদের খোঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে গ্রামবাসীদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy