Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

সংসদে তুই, সভায় থাপ্পড়ের হুমকিতে কদর্য কল্যাণও

একা তাপসে রক্ষে নেই, কুকথায় কম দড় নন কল্যাণও! সংসদের ভিতরে-বাইরে তার প্রমাণ দিচ্ছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভায় বলছেন নরেন্দ্র মোদীকে ভোটের থাপ্পড় মারার কথা। কখনও সংসদে রাজ্যেরই বিজেপি সদস্যের সঙ্গে বিতর্ককে নামিয়ে আনছেন তুই-তোকারিতে। সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির কু-মন্তব্যের জেরে যে তৃণমূল মুখে কালো কাপড় বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, তাঁদেরই সাংসদরা কুকথার ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন সংসদের ভিতরে ও বাইরে!

হুগলির চণ্ডীতলায় সেই সভায় সাংসদ কল্যাণ।  ফাইল চিত্র

হুগলির চণ্ডীতলায় সেই সভায় সাংসদ কল্যাণ। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

একা তাপসে রক্ষে নেই, কুকথায় কম দড় নন কল্যাণও! সংসদের ভিতরে-বাইরে তার প্রমাণ দিচ্ছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভায় বলছেন নরেন্দ্র মোদীকে ভোটের থাপ্পড় মারার কথা। কখনও সংসদে রাজ্যেরই বিজেপি সদস্যের সঙ্গে বিতর্ককে নামিয়ে আনছেন তুই-তোকারিতে।

সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির কু-মন্তব্যের জেরে যে তৃণমূল মুখে কালো কাপড় বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, তাঁদেরই সাংসদরা কুকথার ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন সংসদের ভিতরে ও বাইরে! সাধ্বীকে নিয়ে বিরোধীদের হইচই মোকাবিলায় বিজেপি হাতিয়ার করেছিল তাপস পালের প্রকাশ্য হুমকির প্রসঙ্গ। আজ যখন সংসদে সরকার পক্ষের সঙ্গে দর কষাকষি করে নিরঞ্জন বিতর্কে ইতি টানতে সমর্থ হয়েছে শাসক দল, ঠিক সেই সময় তৃণমূলের আর এক সাংসদের কদর্য মন্তব্য নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিজেপির হাতে। আর এই সুযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করেনি নরেন্দ্র মোদীর দল।

দু’দিন আগে হুগলির চণ্ডীতলার সভায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে কল্যাণ বলেছেন, “২০১৯ সালে ভোটের থাপ্পড় মোদীকে গাঁধীনগরে পাঠিয়ে দেবে। ওখান থেকে ও আর বেরোতে পারবে না। ওর মতো অপদার্থ প্রধানমন্ত্রী কেউ দেখেনি।” এতেই তেতে উঠেছে বিজেপি। দলের সভাপতি অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ নেতা সচিব শ্রীকান্ত শর্মা একটি বিবৃতি জারি করে মমতাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।

শ্রীকান্ত আজ বলেন, “কলকাতায় অমিত শাহের সভার বিপুল সাফল্যের পর হতাশায় ভুগছেন মমতা। এক দিকে তিনি দলের সাংসদদের সংসদে প্রতিবাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, কিন্তু হতাশাগ্রস্ত তৃণমূল নেত্রী কল্যাণের ওই সব অপশব্দের পরেও নীরব থেকে দ্বিচারিতার পরিচয় দিয়েছেন। নৈতিকতার এই অবক্ষয় আসলে তৃণমূলেরই অবক্ষয়ের সূচনা।”

বিজেপির এই আক্রমণের পরেও যে কল্যাণ চুপ থাকছেন এমন নয়। এ দিনই লোকসভায় বিজেপির দুই নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি এবং সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে বিতর্ককে তিনি ‘তুই তোকারি’-তে নামিয়ে আনেন। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, আজ দলের পক্ষ থেকে লোকসভায় সারদা চিটফান্ড নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৩ ধারায় নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সেই অস্বস্তিই কল্যাণের জিভের লাগাম ফের খুলে দিয়েছে।

কল্যাণ এ দিন তেতে ওঠেন ‘অপ্রাসঙ্গিক আইন বাতিল’ করার বিল নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে। তাঁর বক্তৃতার সময় সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রুডি তাঁর আসন থেকে উঠে অন্যত্র যেতেই ক্ষুব্ধ কল্যাণ স্পিকারকে অভিযোগ জানান। দুই পক্ষ থেকেই চিৎকার শুরু হয়। কল্যাণ বলেন, “এই জন্যই আপনাকে আধামন্ত্রী করা হয়েছে।” অহলুওয়ালিয়া এই সময় উঠে দাঁড়িয়ে আপত্তি জানান। কল্যাণ বলেন, “তুই বোস আগে।” পরে অবশ্য এই যাবতীয় বাদানুবাদ রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়।

বিজেপি নেতারা বলছেন, যে দলের নেত্রী হাতের মুদ্রা করে প্রকাশ্যে ‘বাঁশ দেওয়া’ কাকে বলে দেখিয়েছেন, তাঁর দলের অন্য নেতারা যে সেই পথেই চলবেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। গত বছর খোদ মমতা ক্যানিংয়ের একটি জনসভায় তিন ঘণ্টা টানা বক্তৃতা করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “আমি কি মারব গিয়ে?” খোদ দলনেত্রী যখন প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করার নৈতিক অধিকার দিয়ে দেন, তখন তাঁর অনুচররা তো তা অনুসরণ করবেনই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আস্থা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর উপরে। মমতা সরকারের দুর্নীতি ও কুশাসনের আবহে তাঁরা মোদীর উপরেই ভরসা রাখছেন বলে দাবি বিজেপি নেতাদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy